সম্মাননা পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ববিতা নায়করাজ রাজ্জাকের নামে একটি ফিল্ম ইনস্টিটিউট গড়ার দাবি করেন। চলচ্চিত্রে নায়করাজের অবদানের কথা উল্লেখ করে ববিতা বলেন, ‘আমি চাই প্রয়াত শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাকের নামে একটি ইনস্টিটিউট হোক। কিংবা তাকে নিয়ে একটি ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করা হোক।’
চলচ্চিত্র শিল্পীদের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের জন্য স্বল্পমূল্যের বাড়ি দরকার। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আধুনিক যন্ত্রপাতিরও প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রত্যাশা এটুকুই।’
রবিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৪১তম এই আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমাদের দেশে এখন অনেক ভালো সিনেমা হয়। সবসময় তো দেখতে পারি না, তবে বিমানে যাতায়াতের সময় সিনেমা দেখি। ওই একটাই সুযোগ, নিরিবিলি দেখি। এর বাইরে তো সময় পাই না। সারা দিন মিটিং আর ফাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘চলচ্চিত্র মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। এর মাধ্যমে সমাজে অনেক বক্তব্য পৌঁছানো যায়। দেশ ও সমাজের ভালোর জন্য অনেক ভূমিকা রাখতে পারে চলচ্চিত্র। একটা সময় সিনেমা দেখা বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এখন মানুষ আবারও সিনেমা দেখছে। এটা আনন্দের খবর।’
চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার মন্তব্য, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, এমন বিষয় সিনেমায় তুলে ধরা প্রয়োজন।’
বিএফডিসি ও চলচ্চিত্র শিল্প যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল, শেখ হাসিনা মনে করিয়ে দিলেন সেটা। তিনি আশ্বাস দিলেন, ‘আমরা যেন বিশ্বমানের চলচ্চিত্র বেশি বেশি বানাতে পারি, সেজন্য যা যা করা দরকার আমার পক্ষ থেকে আমি সবই করবো।’
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর মধ্য থেকে সেরা কাজের জন্য ২৫টি বিভাগে মোট ৩১ জন বিজয়ীর হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্রেস্ট, মেডেল ও চেক তুলে দেন তিনি। এ সময় তার দুই পাশে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
এবারের আসরে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা ও ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত অভিনেতা ফারুক।
আজীবন সম্মাননা: চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি ববিতা ও ফারুক (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: অজ্ঞাতনামা, প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর।
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: ঘ্রাণ, প্রযোজক এসএম কামরুল আহসান।
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: জন্মসাথী, প্রযোজক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক: অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র: চঞ্চল চৌধুরী, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র: তিশা, ছবি-অস্তিত্ব ও কুসুম শিকদার, ছবি-শঙ্খচিল (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা: আলীরাজ, ছবি-পুড়ে যায় মন ও ফজলুর রহমান বাবু, ছবি-মেয়েটি এখন কোথায় যাবে (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেত্রী: তানিয়া আহমেদ, কৃষ্ণপক্ষ।
শ্রেষ্ঠ খল-অভিনেতা: শহীদুজ্জামান সেলিম, অজ্ঞাতনামা।
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি, শঙ্খচিল।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ গায়ক: ওয়াকিল আহমেদ, গান-অমৃত মেঘের বারি, ছবি-দর্পণ বিসর্জন।
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: মেহের আফরোজ শাওন, গান-যদি মন কাঁদে, ছবি-কৃষ্ণপক্ষ।
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, গান-বিধিরে ও বিধি, ছবি-মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ সুরকার: ইমন সাহা, গান-বিধিরে ও বিধি, ছবি-মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: তৌকীর আহমেদ, অজ্ঞাতনামা।
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: রুবাইয়াত হোসেন, আন্ডার কনস্ট্রাকশন।
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: উত্তম গুহ, শঙ্খচিল।
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: রাশেদ জামান, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: সাত্তার, ছবি-নিয়তি ও ফারজানা সান, ছবি-আয়নাবাজি (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান: মানিক, আন্ডার কনস্ট্রাকশন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক। ১৯৭৫ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে প্রথম আজীবন সম্মাননা পুরস্কার চালু করা হয়।
ছবি: ফোকাস বাংলা