সনজীদা খাতুনের জীবনের গল্প ‘বোধিবৃক্ষ’

সনজীদা খাতুনবাঙালি সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা ও বিকাশে যে ক’জন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ, তাদের অন্যতম সনজীদা খাতুন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা। যিনি একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক। তাঁর প্রত্যক্ষ স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে দেশের অন্যতম তিন শীর্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠন- ‘ছায়ানট’, ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ’ ও ‘কণ্ঠশীলন’।
তাঁর এই সমৃদ্ধ জীবন ও কর্মের নানা বিষয় নিয়ে আবীর শ্রেষ্ঠ নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘বোধিবৃক্ষ’। চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে সনজীদা খাতুনের শৈশবের নানা স্মৃতি, জীবন সংগ্রাম ও শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার বিষয়গুলো। এখানে তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ডা. সারোয়ার আলী, ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল ও লাইসা আহমেদ লিসা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অর্থায়নে এবং প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় নির্মিত এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি ১৪ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবের ষষ্ঠ দিনে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।
প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি প্রসঙ্গে নির্মাতা আবীর শ্রেষ্ঠ বলেন, ‘‘এই বয়সে আমার চেয়ে বেশি কষ্ট তাঁকে বোধহয় আর কেউ দেয়নি। যখন-তখন তাঁর ঘরে হানা দেয়া। কখনও ছায়ানট, কখনও তাঁর বাসা, কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটেছি। বকা দিতেন, আবার সম্মতিও দিতেন আমার এই নির্মাণ ভাবনায়। সেই প্রশ্রয় পেয়ে একদিন বলেই ফেললাম, রমনার বটমূলে তিনি হাঁটছেন- এমন একটি দৃশ্যধারণের কথা। আপার হাঁটতে অনেক কষ্ট হয়, তবু একদিন সকালে ঠিকই তিনি আমার ইচ্ছা পূরণ করলেন। গাড়ি থেকে নেমে হুইল চেয়ারে করে বটমূলে এসে হাঁটলেন কিছুটা সময়। দর্শকরা এই দৃশ্যের আবহে শুনবেন আপার কণ্ঠে ‘আকাশভরা সূর্য-তারা’ গানটি। সম্পাদনার টেবিলে এই দৃশ্য যতবার দেখেছি ততবার বিস্ময়ে তাকিয়ে শ্রদ্ধায় মাথানত করেছি। তিনি সত্যিই আমাদের ‘বোধিবৃক্ষ’।’’
একটি দৃশ্যে রমনার বটমূলে হাঁটছেন সনজীদা খাতুনপ্রসঙ্গত, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সনজীদা খাতুনকে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ দিয়েছে। এছাড়া তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ‘রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার’, কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি।
এভাবেই দিনে দিনে তিনি বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে হয়ে উঠেছেন মহীরুহ বটবৃক্ষ।