যেভাবে সৃষ্টি হলো স্বাধীন দেশের প্রথম গান

সুজেয় শ্যাম। ছবি- সংগৃহীত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল। পশ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জের সার্কুলার রোডে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে আলাদা উত্তেজনা। শোনা যাচ্ছে, যেকোনও মুহূর্তে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে। আর এ জন্য নেওয়া হলো প্রস্তুতিও। বেতারের দুই কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান ও তাহের সুলতান ডেকে পাঠালেন সুরকার সুজেয় শ্যামকে। উদ্দেশ্য, বিজয়ের গান তৈরি। বেশ তড়িঘড়ি করেই সৃষ্টি হয় ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’। আর এটাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে গাওয়া শেষ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গান। আমাদের বিশেষ এ আয়োজনে এটি নিয়েই কথা বলেছেন এর সুরকার সুজেয় শ্যাম-

‘১৬ ডিসেম্বর সকালে আমাকে হঠাৎ ডেকে পাঠান বেতারের দুই কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান ও তাহের সুলতান। বললেন, আজ অন্য গানের দরকার নেই। দরকার বিজয়ের গান। আজ বিজয়ের গান করতে হবে। আমি বললাম, নতুন গান কোথায় পাব? তাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, শহীদুল ইসলামকে বলুন, তিনি লিখে দেবেন। এরপর আমি গীতিকার শহীদুল ইসলামকে ঘটনাটা বললাম। তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই গানের স্থায়ীটুকু লিখে দিলেন। এভাবেই শুরু।’

বিজয়ের প্রথম গান ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান প্রসঙ্গে এভাবে কথাগুলো তুলে ধরলেন সুজেয় শ্যাম।

আর সুর তৈরির সময়কার ঘটনা তুলে ধরেন এভাবে, ‌‘সে সময় হারমোনিয়াম ভাগে পাওয়াটা কষ্টকর ছিল। কারণ আমাদের অনেক কিছুই সীমিত ছিল। হারমোনিয়ামও তাই। এজন্য মুখে মুখেই গানের স্থায়ীটুকু নিয়ে সুর করার চেষ্টা করি। এরপর একটা হারমোনিয়াম ম্যানেজ হয়। সেখানেই চার লাইন তুলি। এরপর শহীদুল ইসলাম দ্রুত দুটি অন্তরা দেয়। সেগুলোও সুরে বসিয়ে নিই।’

সেদিন অজিত রারের নেতৃত্বে গানটি গাওয়া হয়। মহড়া কক্ষে রথীন্দ্রনাথ রায়, প্রবাল চৌধুরী, মান্না হক, মৃণাল কান্তি দাস, রফিকুল আলম, অনুপ ভট্টাচার্য, কল্যাণী ঘোষ, তিমির নন্দী, তপন মাহমুদ, উমা খান, রূপা ফরহাদ, মালা খুররমসহ আরও বেশ কয়েকজন গানটির মহড়ায় অংশ নেন। দেড় ঘণ্টার অনুশীলন শেষে এটি রেকর্ড করা হয়।

এই গানে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাদ্যযন্ত্র বাজান। এরমধ্যে তবলা সংগত করেছিলেন অরুণ গোস্বামী, দোতারায় অবিনাশ শীল, বেহালায় সুবল দত্ত, গিটারে ছিলেন রুমু খান। সেদিনই প্রচার হয় স্বাধীন বাংলা বেতারের শেষ গানটি।