আমজাদ হোসেনের শেষ ঠিকানা শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে

আমজাদ হোসেননন্দিত চলচ্চিত্রকার, লেখক, অভিনেতা আমজাদ হোসেনের মরদেহ এখনও ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের হিমঘরে। মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে সেখানে কাজ করছেন তার ছোট ছেলে নির্মাতা সোহেল আরমান। তবে তার আগেই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে দাফনের বিষয়ে। জানা গেছে, আমজাদ হোসেনের শেষ ঠিকানা হচ্ছে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।  
এদিকে ঢাকায় আমজাদ হোসেনের বড় ছেড়ে অপেক্ষা করছেন বাবার মরদেহ গ্রহণ করার জন্য। কারণ, বিদেশ থেকে কোনও মরদেহ দেশে আনতে হলে দুই দেশেই রাষ্ট্রীয় কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমজাদ হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলের (দোদুল) স্ত্রী রাশেদা আক্তার লাজুক ১৫ ডিসেম্বর রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান।
আমজাদ হোসেনতার ভাষায়, ‘শনি ও রবিবার ব্যাংককে সরকারি বন্ধ। এদিকে বাংলাদেশেও শুক্রবার থেকে টানা বন্ধ। ফলে উভয় দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে বিলম্ব হচ্ছে। তবুও আমরা রাত-দিন চেষ্টা করছি। কাল (১৬ ডিসেম্বর) হয়তো অনুমোদন পাওয়া যাবে। ফলে রবিবার রাত অথবা সোমবার যে কোনও সময় দেশে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। আর আমার শাশুড়ি সুরাইয়া আকতারের ইচ্ছাতেই দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।’  
১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমজাদ হোসেন। এর আগে ১৮ নভেম্বর সকালে ঢাকায় নিজ বাসায় ঘুমের মধ্যে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন আমজাদ হোসেন। পরে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২৭ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে।
৭৬ বছর বয়সী এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নানা ধরনের কাজের জন্য সমাদৃত। একাধারে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে কাজ করেছেন।
গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া শিশুসাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ একাধিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
আমজাদ হোসেন ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন।
তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমণি’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ প্রভৃতি।