ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন জানিয়েছেন, সাইদুল আনাম টুটুলকে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শ্রদ্ধা জানানো হবে আগামী ২০ ডিসেম্বর, সকাল ১১টায়।
শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা হবে। তবে দাফন কোথায় করা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বেলায়াত হোসেন মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টুটুল ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে জীবদ্দশায় তিনি কোনও সার্টিফিকেট নেননি। আমাদের সবার ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধা টুটুল ভাইয়ের শেষ ঠিকানা মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হোক। সে বিষয়ে কিছু রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত দরকার। আশা করছি কাল (১৯ ডিসেম্বর) সেটির সুরাহা হবে। সে জন্যই দাফনের বিষয়টি এখনও আমরা চূড়ান্ত নই।’
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাইদুল আনাম টুটুল। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত প্রায় দুইটার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর তাকে দ্রুত ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটের সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এই নির্মাতা।
সাইদুল আনাম টুটুল ১৯৫০ সালের ১ এপ্রিল পুরনো ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কৈশোর থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা সরকারি মুসলিম স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক এবং পরে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে সাইদুল আনাম টুটুল চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং ৬ নম্বর সেক্টরের আওতায় খুলনা অঞ্চলে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে ফিরে সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে এর জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে তিনি ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ ছাড়াও সম্পাদনা করেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী নির্মিত ‘ঘুড্ডি’, শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত ‘দহন’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আগামী’, ‘দুখাই’, ‘দীপু নাম্বার টু’। চলচ্চিত্র সম্পাদনার দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন গুণী চলচ্চিত্র শিক্ষক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি চলচ্চিত্র ভাষা ও সম্পাদনা বিষয়ে পাঠদান করতেন।
চলচ্চিত্রকার সাইদুল আনাম টুটুল ২০০৩ সালে নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’। ১৯৪৬-৪৭ সালের বাংলার চাষিদের তেভাগা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ সমালোচক ও দর্শক উভয়ের কাছে একটি সুনির্মিত চলচ্চিত্র হিসেবে নন্দিত হয়।
সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের একজন কিংবদন্তি নির্মাতা। বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাটকের নির্মাতা তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটকগুলো হলো নাল পিরান, বখাটে, সেকু সেকান্দর, ৫২ গলির এক গলি, আপন পর, গোবর চোর, হেলিকপ্টার, নিশিকাব্য, অপরাজিতা ইত্যাদি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের চলচ্চিত্র অনুদানে সাইদুল আনাম টুটুল ‘কালবেলা’ নামে তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে। চলচ্চিত্রটির দৃশ্যধারণের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ তিনি শেষ করে এনেছিলেন। বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য তিনি শিগগিরই রাজশাহীতে যাবেন এমন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।