‘আমাকে এভাবে কেউ কখনও বলেনি’

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও কুমার বিম্বজিৎ

আমার ও তার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। আমাকে তিনি ‘তুই’ সম্বোধনও করতেন। এই তো সেদিন বুলবুল ভাইয়ের (আহমেদ ইমতিয়াজ) বুকে রিং পরানো হবে, তিনি আমারে বললেন, ‘তোরে আমি নিয়ে যাবো। তোর যেতেই হবে।’

এভাবে কেউ আমাকে বলেনি কখনও। এই যে অধিকার, আস্থা- তা নির্ভেজাল। তবে শুধু ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার বিষয় নয়। তিনি আমাদের দেশের সংগীতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে দেশের গান, চলচ্চিত্রের গান, অ্যালবাম দিয়ে তিনি যে অবদান রেখেছেন, তা ভোলার নয়। তার লেখনীতে যে কী ধার, যারা এটি গেয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

ক্ষুরধার এই লেখনী বা ক্ষণজন্মা মানুষের আর রিপ্লেসমেন্ট হবে না। আমি বলবো, একটা মহীরুহের বিদায় এটা।

দেশ স্বাধীনের পর টানা আট বছর তিনি শুধু দেশের গান লিখেছেন। মানুষ কিন্তু ভালোভাবেই জানেন, দেশের গানের স্পন্সর পাওয়া যায় না, বাণিজ্যিকভাবে লোকসান হয়। তারপরও দেশের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে এভাবে বছরের পর বছর শুধু দেশের গান করা যায়!

যুদ্ধের সময় গান লেখা ও পরবর্তী সময়ে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত টাচ করতে পারাটাও বিশাল বিষয়। দেশের গান ছাড়াও তার অন্যগুলোও অনবদ্য। আমার গাওয়া গানগুলো যখন নিজে শুনি আশ্চর্য হই। ‘ও ডাক্তার’ কিন্তু
ইন্টোভার্ট একটা বিষয় তুলে ধরে। যদি বলি, ‘আমি তোমার আগে যদি পৃথিবী ছেড়ে যাই, সাদা শাড়ি পরো না’ গানটির কথা; কী রোমান্টিক! আবার তিনি কৃষ্ণকে বলছেন, ‘কৃষ্ণ তোর বাঁশিটা দে না আমারে ধার।
এ পরাণে রাঁধা ছিল। আগে অনেক চাইত আমায়; এখন চায় না আর’!
‘ধার’, ‘আর’- কী যে অন্ত্যমিল, অভিব্যক্তি!
তিনি তার জীবনটা গানকেই দিয়েছেন। যারা সত্যিকার অর্থে দেশকে নিজের সবটুকু দিয়েছেন, তারা পরিবারের দিকেও তাকায়নি। তারা সৃষ্টি ও দেশের পেছনে অবদান রেখে গেছেন। তিনি হচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

আমার বাসার দেয়ালে হাতের ছাপ রাখার একটা ব্যবস্থা আছে। বাসায় লোকজন এলে তারা দেয়ালের প্লেটে ছাপ দিয়ে দেন। কিছু দিন আগে এটি চালু করেছিলাম। মাঝে বন্ধ ছিল। আবার নতুন করে এটি তৈরি করতে গতকাল মিস্ত্রি ডেকেছিলাম।
আশ্চর্য বিষয়, পুরনো প্লেটগুলো বের করার সময় প্রথমটি বের হয়েছিল বুলবুল ভাইয়ের হাতের ছাপ!

অথচ আজ আমি নিজ হাতে তার মরদেহটা ধরলাম!
মৃত্যু শাশ্বত, জানি। কিন্তু এমনভাবে, এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারি না। ভালো থাকুক আমাদের পাওয়ার লাইট, আমাদের আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

লেখক: সংগীতশিল্পী