বর্ষপূর্তি বিশেষ: কী করবো, আমি তো এমনই

সাংবাদিকের মূল কাজ শিল্পীদের রোজকার প্রাসঙ্গিক খবরাখবর জনসম্মুখে তুলে ধরা। শুধু কর্মের প্রচারণাই নয়, প্রয়োজন পড়ে শিল্পকর্মের গঠনমূলক সমালোচনারও। এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের ভূমিকা বেশ সীমিত; সহযোগিতা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বিশ্ব বিনোদন মিডিয়া ঠিক এই ভাবধারাতেই চলছে- তা হলফ করে বলা যাবে না। তবে অনেকাংশে এই ধারাটি এখনও বলবৎ রয়েছে- বাংলাদেশের মিডিয়ায়। এ নিয়ে স্বস্তি রয়েছে দুই শিবিরেই। এর মাঝেও শিল্পী আর সাংবাদিক প্রতিপক্ষের ভূমিকায় দাঁড়ান। শিল্পীদের প্রতি সাংবাদিকদের এন্তার অভিযোগ, মাঝে মাঝে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সংবাদমাধ্যমেও। শিল্পীরাও আজকাল আর মুখে কুলুপ এঁটে বসে নেই। যার কিছুটা ভেসে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়, বাকিটুকু শিল্পীমনে জমে থাকে স্বস্তি অথবা বেদনার বুদবুদ হয়ে। মিডিয়া নিয়ে শিল্পীমনে জমে থাকা তেমনই কিছু অপ্রকাশিত ‘বুদবুদ’ তুলে আনার চেষ্টা ছিল বাংলা ট্রিবিউন-এর পঞ্চম বর্ষপূর্তির এই বিশেষ আয়োজনে।

শবনম ফারিয়া, ছবি: মঞ্জুরুল আলমআমার সঙ্গে মিডিয়ার প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হয়। বলা যায়, ইস্যুগুলো যে খুব গুরুতর তা-ও নয়। তবে ঝগড়াটা হয় গুরুতর!
আসলে আমি সবসময় দর্শকের দৃষ্টিতে নিউজগুলো পড়ি। হয়তো একজন দর্শক যেভাবে ভাবে, সেই ভাবনাটাই আমার মধ্যে ভর করে। আমি খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক জীবন ধারণ করি। কেন জানি মনে হয়, আমার জীবনে এমন কোনও ঘটনাই ঘটে না, যা নিউজ হওয়ার মতো!
দেখা গেল, আমার কোনও ছোটখাটো বা ব্যক্তিগত বিষয়ে নিউজ চলে এসেছে। আমি তখন বিরাট ধাক্কা খাই। হয়তো বিরক্ত হয়ে ফেসবুকেও সেটি প্রকাশ করে ফেলি। উনি (সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক) তখন ভাবেন, এটা ফারিয়া কী বললেন! তিনি এভাবে কথা বললেন কেন? এসব বিষয়ে অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। হয়তো এই ছোট বিষয়টি নিয়ে এলাহি কাণ্ড বাঁধিয়ে দেই। কিন্তু আমি আসলে কী করবো! কারণ, আমি তো এমনই।
আবার এমন হলো, কোনও এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছি, হঠাৎ করে নাটকের নাম ভুলে গেলাম। পরিচালক, সহকর্মী সবার নামই বলছি, কিন্তু ওই একটা জায়গায় আমি আটকে যাচ্ছি। এ রকম একটি বা দুটি নয়, প্রায় প্রতিটি নাটকের ক্ষেত্রে ঘটে। অনেকে তখন হয়তো ভাবতে পারেন আমি কাজ সম্পর্কে আন্তরিক নই। এটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে তিক্ততাও হয়। স্বাভাবিক। তবে এও ঠিক, আমি যে শবনম ফারিয়া, তার অনেক বড় অবদান আছে সংবাদমাধ্যম ও তার সদস্যদের।
অবশ্যই নিজের কাজ দিয়েও সেটি প্রমাণ করতে হয়েছে। কিন্তু বলা যায়, তাদের দেখানো পথ বা পরামর্শেই আমি এখানে থিতু হতে পেরেছি।  
কারণ, যখন শোবিজে আসি, আমি এখানে একেবারেই নতুন। আমার পরিবারের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত নন। বা আমার পরিচিত কেউ-ই শোবিজে নেই। তাই এখানকার পথচলা আমার জন্য ভীষণ কঠিন হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটা হয়নি সংবাদমাধ্যমের জন্যই।
২০১১ সালে আমার পথচলা শুরু। আমার মনে আছে ২০১৩ সালে একটি নাটক করেছিলাম, আদনান আল রাজীবের ‘অ্যাট এইটিন’। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত আর কোনও নাটকে কাজ করা হয়নি। মাঝে পুরো সময়টা আমি বিভিন্ন কোম্পানি আর সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন পাতার মডেল হয়েছি।
বিশেষ করে লাইফ স্টাইল পেজগুলোই ছিল আমার মূল স্থান। আমার মনে আছে, এমন হয়েছে একদিনেই যুগান্তর, সমকাল, প্রথম আলো, জনকণ্ঠসহ আরও কয়েকটি পত্রিকার লাইফ স্টাইল পেজে আমার ছবি ছাপা হয়েছে। এটা ছিল যেমন পরম আনন্দের, তেমন ভালোবাসার জায়গা। আবার আস্থারও।
এরপর আমি ধীরে ধীরে বিনোদন পর্দায় সম্পৃক্ত হলাম। তবে সেই লাইফ স্টাইল পেজের সাংবাদিক ভাই ও বোনদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ এখনও রয়েছে। আগে যেমন তারা অধিকার নিয়ে কথা বলতেন, এখনও সেভাবে পরামর্শ দেন। আবার বিনোদন অঙ্গনেও আমি এমন কিছু মানুষ পেয়েছি, কোনও সমস্যায় পড়লে অদৃশ্য বাহু প্রসারিত করে আমাকে আগলে রাখেন তারা। তা যতই ঝগড়া-বাহাস হোক। এটাও আমার প্রাপ্তি।
আর একটা কথা বলি। এখন হয়তো আমি শোবিজে ব্যস্ত। কিন্তু আমি যদি শোবিজে কাজ না করতাম, তবে সাংবাদিক হতাম। আমার অনেক পুরনো একটা ইচ্ছে এটা।
অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার কণ্ঠ থেকে লেখাটি গ্রন্থনা করেছেন ওয়ালিউল বিশ্বাস।