এমন সাফল্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল (১৭ জুন) এর প্রযোজক বরাবর প্রশংসাপত্র পাঠায়। একই দিনে ছবিটি নকল ও এর স্বপক্ষে পরিচালক মালেক আফসারীর নজিরবিহীন বক্তব্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এটি দিয়েছেন নাট্য ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আনন্দ কুটুম।
চলচ্চিত্রটির প্রযোজক (শাকিব ও ইকবাল) এবং পরিচালক মালেক আফসারীর বিরুদ্ধে সেন্সর বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন এই সংস্কৃতিকর্মী।
মুক্তির পর থেকেই ছবিটির বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ ছিল। কোরিয়ান ছবি ‘দ্য টার্গেট’ থেকে নকল করা হয়েছে ‘পাসওয়ার্ড’- এমন খবর বহুবার প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে।
অভিযোগপত্রে আনন্দ কুটুম উল্লেখ করেছেন, “পাসওয়ার্ড ছবির কোথাও উল্লেখ নেই এটি ‘দ্য টার্গেট’ ছবির কপিরাইট নিয়ে নির্মিত হয়েছে। ছবির কোথাও উল্লেখ নেই এটি বিদেশি সিনেমার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। পুনঃসেন্সরের মাধ্যমে পরিষ্কার হওয়া যাবে যে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি নকল। লোকেশন ভিন্ন হলেও দুটো সিনেমার দৃশ্যধারণ করা হয়েছে একইভাবে। গল্প, দৃশ্য, শট ও অ্যাকশনে নকলের পাশাপাশি প্রপসের ক্ষেত্রেও নকল করার প্রবণতা ছিল ছবিটির মধ্যে। যখন একজন পরিচালক বিদেশি সিনেমা নকল করেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে বলেন এটা নকল নয়- গবেষণা, তখন পরবর্তী প্রজন্মের নির্মাতারা আশাহত হন। অন্যের গল্প এবং দৃশ্যধারণ নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া কি নিয়মবহির্ভূত নয়?’’
বিষয়টি নিয়ে আনন্দ কুটুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালেক আফসারীর মতো পরিচালকদের এই বার্তাটুকুই আমরা পৌঁছে দিতে চাই, দেশ এতটা অথর্ব হয়ে পড়েনি যে এখানে যা ইচ্ছা তা-ই বলে দেওয়া যায়। যা ইচ্ছা তাই চুরি করে হজম করে ফেলা যায়।’
এ প্রসঙ্গে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিজামূল কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু এজেন্ডা নিয়ে আমরা একসঙ্গে বসবো। পরবর্তী সভার এজেন্ডায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হলে এটি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত নিয়ম হলো যেসব জায়গায় বা দৃশ্যে সমস্যা বা নকলের অভিযোগ রয়েছে সেসব দৃশ্য কেটে আবার সেন্সরে জমা দেওয়া।’
এদিকে প্রশংসাপত্র ও অভিযোগপত্র দুটি বিষয়েই যোগাযোগ করা হয় ‘পাসওয়ার্ড’-এর প্রযোজক ইকবালের সঙ্গে।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই ছবিটি ভালো ব্যবসা করছে। এর ফলে আমরা একটি ধন্যবাদপত্র পেয়েছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে আরও ২০টি প্রেক্ষাগৃহ যুক্ত হবে। আর নকলের অভিযোগপত্র নিয়ে ভাবছি না।’
অভিযোগপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রশ্নে তার ভাষ্য, ‘‘এখানে অভিযোগের কিছু নাই। ‘দ্য টার্গেট’ সোয়া ১ ঘণ্টার ছবি। আর ‘পাসওয়ার্ড’ ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ছবি। একঘণ্টা বেশি এর দৈর্ঘ্য। ‘দ্য টার্গেট’-এ কোনও নায়িকা চরিত্র আছে, মিশার মতো চরিত্র আছে? বা কোনও কমেডিও নাই। সুতরাং এ অভিযোগে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নাই। আর ছবি তো দর্শক দেখেই ফেলেছেন। তারাই বিচার করবেন। এই অভিযোগে বরং আমাদের ভালো হচ্ছে। ছবিটি নিয়ে আলোচনা চলছে।’’
‘পাসওয়ার্ড’ ছবির গল্পটি অনেকটাই এমন, রুদ্র আর পাঁচটা ছেলের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ভিক্টর বাধা হয়ে দাঁড়ায় রুদ্রের জীবনে। ভিক্টরের সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জেনে ফেলে রুদ্র। আর সেটা উদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে সে।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিক একই গল্পের প্লট নিয়ে এগিয়েছে কোরিয়ান ছবি ‘দ্য টার্গেট’।
যারা ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি দেখেছেন তারা চাইলে মিলিয়ে নিতে পারেন, আদৌ কোনও মিল রয়েছে কি না ‘দ্য টার্গেট’-এর সঙ্গে: