ঈদ বিশেষ

‘সিগারেট আর চিকেন- দুটোই আমরা এক করে ফেলেছি’

ঈদুল আজহা মানে যতটা উৎসব, ততধিক স্যাক্রিফাইসের গল্প। প্রিয় পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় এই উৎসব পালন করেন। অনেকটা এই ভাবধারাকে সামনে রেখে এই ঈদে আমরা তারকাদের কাছে জানার চেষ্টা করেছি তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া স্যাক্রিফাইস বা আত্মত্যাগের কিছু স্মৃতি। যে ত্যাগের বিনিময়ে তাদের অনেকেই হয়েছেন আজকের আলোকিত তারকা। জেনে নিন নন্দিত সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদের বয়ানে তার জীবনের স্যাক্রিফাইস আর ঈদুল আজহা নিয়ে কিছু ভিন্ন ভাবনা—

হাবিব ওয়াহিদ, ছবি: সংগৃহীতধূমপান ছেড়ে দিয়েছি, আমার মনে হয় এরচেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস ব্যক্তিজীবনে আমার আর ঘটেনি। এটাকে আমার জীবনের অন্যতম বিজয় বলেও মনে হয়। কারণ, এখনও ভাবতে পারি না আমি সত্যি সত্যিই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি।

এবার একটু আমি আমার ভেতরে জমানো কিছু দুঃখবোধ শেয়ার করতে চাই। পশু-প্রাণী জবাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের ধর্মীয় একটা স্পষ্ট নিয়ম আছে। মানে জবাই করতে হবে আল্লাহর নামে। একটা প্রাণীকে যখন আল্লাহর নামে তার প্রাণটা স্যাক্রিফাইস করা হয় নিজেদের ভোগের জন্য, তখনই সেটা হালাল হয়। কারণ, ওই প্রাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ-পাক। আরেকটা তো আছে বৈজ্ঞানিক বিষয়, কীভাবে কোথায় ছুরি চালাবেন। কিন্তু একটা প্রাণ যখন আপনার জন্য স্যাক্রিফাইস হচ্ছে, অবশ্যই সেটাকে মন থেকে ফিল করতে হবে। সেটা আল্লাহর নাম নিয়ে করতে হবে এবং আপনার ভোগের জন্য যে এই প্রাণীটা স্যাক্রিফাইস হয়েছে সেটা ফিল করে ছুরিটা চালানো উচিত।

ধরুন, এখন আমরা সকাল-বিকাল রেস্তোরাঁয় যাই। বিফ, চিকেন অর্ডার দেই। সেটা দোকানে গিয়ে চা, সিগারেট, কাপড় কেনার মতোই! খুব স্বাভাবিকভাবে বলি, ভাই এক পিস চিকেন দেন তো। পেটভরে খেয়ে ঢেকুর তুলে বেরিয়ে পড়ি।

অথচ একবারও ভাবি না, একটা প্রাণ আমার এই ভোগের জন্য স্যাক্রিফাইস হলো। দোকান থেকে সিগারেট কেনা আর কেএফসি থেকে চিকেন কেনা- দুটোই আমরা এক করে ফেলেছি।

আমি নিজেও একই অপরাধে অপরাধী। একই ফিল আমারও করা হয় না।

আমরা মুসলমানরা হালাল সাইনবোর্ড খুঁজি। হাজার হাজার দোকান হয়েছে। সবাই রাত-দিন খাচ্ছি। হাজার হাজার পশু-প্রাণী স্যাক্রিফাইস হচ্ছে প্রতিদিন। অথচ এসব বোবা পশু-প্রাণীর স্যাক্রিফাইসের কথা একটাবারও মনে করি না। কৃতজ্ঞতা জানাই না সৃষ্টিকর্তাকে।

আমরা এতটাই এই দুনিয়ার চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়ে আছি, এসব ভাবার সময় কই? ইটস আ ভেরি সেইমফুল থিং। আমি নিজেও এটা মানতে পারি না। তবে যখন মনে হয়, নিজের কাছেই লজ্জা করে। আমি চেষ্টা করছি এটা পারমানেন্টলি মাথায় সেট করার।

কোরবানিটা কেন নাজিল হয়েছে? আমার তো মনে হয় এই বোধটা আমাদের মধ্যে জাগ্রত করার জন্য। যেটা এখন কমপ্লিটলি উধাও আমাদের মধ্যে। আরও হতাশার বিষয়, সরা বছর যেমন-তেমন, কোরবানির সময় তো দেখি গরুর সাইজ, রঙ আর দাম নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
এই বিষয়গুলো আমাকে খুব ভাবায়, বেদনা দেয়। ভেতরে ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। তবে নিজে এই বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত মানার চেষ্টা করছি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

অনুলিখন: মাহমুদ মানজুর