আমি এগুলোর ভয় করি না: মৌসুমী

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন নিয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এবার সভাপতি পদে মিশা সওদাগর। অন্যদিকে একই পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তবে সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিএফডিসিতে খল অভিনেতা ড্যানি রাজের কাছে অপমানিত হন তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা নায়িকা মৌসুমী। এছাড়া আগামী ২৫ অক্টোবর নির্বাচনকে ঘিরে নানা অভিযোগও রয়েছে এই অভিনেত্রীর। বিষয়গুলো নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন মৌসুমী—
73184349_2531232780445217_5153190890902126592_nবাংলা ট্রিবিউন: সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আসলে কী ঘটেছিল?
মৌসুমী: আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিতে আমি এখন যুক্ত আছি। সেই সূত্রে সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেত্রী ও কর্মীরা ফোন দিয়ে জানতে চায় আমি কোথায় আছি? আমি তখন প্রচারণার জন্য এফডিসিতে ছিলাম। তারা বলেন আমাকে শুভ কামনা জানাতে এফডিসিতে আসবেন। সে হিসেবে তারা আসেন। তারা শিল্পী সমিতির সামনে আমার সঙ্গে সেলফি তুলে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময়ে ড্যানি রাজ এসে বলেন, ‘এরা করা? আপনার এখানে এসেছেন কেন?’ তিনি ধমকের সুরে বলেন, ‘বের হয়ে যান।’ তখন আমি তাকে বাধা দিয়ে বলি, ‘তারা আমার অতিথি, আপনি উত্তেজিতভাবে কথা বলছেন কেন?’ তখন ড্যানি চিৎকার করে আমাকে বলেন, ‘আপনি কে?’

আমি হতভম্ব হয়ে যাই। শত শত ছবিতে কাজ করা একজন অভিনেত্রীকে শিল্পী সমিতির একজন সদস্য জিজ্ঞেস করছেন ‘আপনি কে?’ আমি পাশে তাকিয়ে দেখি মিশা। তাকে বলি, মিশা তুমি কথা বলছো না কেন? তুমি তো সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। ড্যানি রাজ আমাকে ‘আপনি কে’ বলার সাহস কোথায় পেলেন?
চারদিকে তখন তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলা ট্রিবিউন: এরপর কী ঘটে? বিষয়টি নির্বাচন কমিশনার কি জানেন?
মৌসুমী: এর কিছুক্ষণ পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাঞ্চন ভাই (ইলিয়াস কাঞ্চন) আসেন। বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে বসেন। ঘটনা শোনার পর বেশ ক্ষুব্ধ হন তিনি। এরপর ড্যানিকে বলেন, ‘আপনি কি নির্বাচনের প্রার্থী? অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ নেই, কিন্তু আপনি ভোটার হয়ে অসদাচরণ কেন করেছেন? আপনি কি জানেন এমন আচরণের জন্য এই মুহূর্তে আপনার সদস্যপদ বাতিল করতে পারি?’
এরপর ড্যানি রাজ বলেন, ‘আমি দুঃখিত, আমার ভুল হয়ে গেছে। সরি।’
কিন্তু ক্ষমা চাওয়াই তো সব নয়। একজন সিনিয়র শিল্পীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন, আর ক্ষমা চাইবেন, সব শেষ হয়ে যাবে? আমার প্রশ্ন অন্য সিনিয়র শিল্পীদের কাছে, আপনার সঙ্গে যদি কোনও শিল্পী এমন ব্যবহার করতেন, আপনারা মেনে নিতেন? আমার চেয়েও তো অনেক সিনিয়র শিল্পী এফডিসিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তারা কী বলবেন?
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে আসার কথা ছিল। কয়েকজনের নামও শোনা গেল। এরপর শেষ মুহূর্তে অনেকেই সরে গেলেন। প্যানেল আর হলো না। আপনি তাহলে কাদের ভরসায় নির্বাচন করছেন?
মৌসুমী: এটা ঠিক আমি প্যানেল করতে চেয়েছি। কিন্তু নানা মহলের চাপে অনেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বেনামে বহু হুমকি আসতে থাকে তাদের ফোনে। আমার ফোনেও এগুলো আসছে। তবে আমি এগুলোর ভয় করি না।
তাদের তো পরিকল্পনা ছিল ইলেকশন নয়, সিলেকশন। সবাই সরে যাবে, মাঝখান দিয়ে তারা বিজয়ী হবেন। তবে আমি নির্বাচন করাতে সেটা আর হচ্ছে না। নির্বাচন হচ্ছে। আর আমার ভরসার জায়গাটা হচ্ছেন সাধারণ ভোটার। ২৬-২৭ বছর ধরে তাদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা। তারা আমাকে যেমন ভালো করে জানেন-চেনেন, আমিও তেমনিভাবে তাদের চিনি ও জানি।
বাংলা ট্রিবিউন: অভিযোগ রয়েছে আপনাকে পাওয়া যায় না? সাংবাদিকরা পান না। সাধারণ ভোটাররা আপনার কাছে কীভাবে পৌঁছাবেন?

মৌসুমী: আমি তো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলি। এটা তো নতুন নয়। অনেক পুরনো শিল্পীরা আমার নম্বর জানেন। আমার গোড়াপত্তন তো এফডিসিতেই। সেখানে সরাসরি যে কেউই আমার সঙ্গে কথা ও দেখা করেন। তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কার্যালয়ও (শিল্পী সমিতি) আছে। এরপর আমি আমার একটি নম্বর প্রত্যেক ভোটারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, যেন তারা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আশা করি যোগাযোগের কোনও সমস্যা হবে না।
বাংলা ট্রিবিউন: একটি বিষয় হয়তো খেয়াল করেছেন, চলচ্চিত্রের নির্মাণ একেবারে কমে গেছে। চলতি বছর খুবই কম সংখ্যক ছবি মুক্তি পেয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে কী ভাবছেন?
মৌসুমী: আগে তো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা সেই পরিবেশটাই তৈরি করতে চাই। এগুলো নিয়ে আগে আমাদের কাজ করতে হবে। অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রযোজকরা আস্তে আস্তে সিনেমায় ফিরবেন।