জাদুকর জুয়েল আইচের ‘করোনা মারার জাদু’

জুয়েল আইচজুয়েল আইচ অনেক গুণে গুণান্বিত মানুষ। দেশের প্রধান জাদুকর তো বটেই, পাশাপাশি ভালো ছবি আঁকেন, বাঁশি বাজান, সঞ্চালনাতেও অসাধারণ। মাঝে মাঝেই অসাধারণ সব ছড়া লিখে চমকে দেন তার জাদুর জালে আটকে থাকা ভক্তদের। 






একুশে পদকপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা চলমান করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ জাদু নিয়ে হাজির হয়েছেন! তবে সেটি ভিডিও বার্তা কিংবা কোনও টিভি শোতে হাজির হয়ে নয়। ১৭ এপ্রিল নিজের ফেসবুক দেয়ালে সেটি প্রকাশ করেছেন। জাদুটি মূলত তিনি তুলে ধরেছেন ছড়ার ছলে। ছড়াটির নাম ‘করোনা মারার জাদু’।
মাস্ক পরা একটি ছবিসহ প্রকাশ করা বিশেষ এই ছড়াটি হলো এমন—


কালোজিরা মধু
করোনা মারার জাদু।



গরম জলে লেবু
কোভিড হবে কাবু।
কাঁচা রসুন খেলে
ভাইরাস যাবে চলে।
নিম পাতার চা
গরম গরম খা।
সব ওষুধের দাদা
নামটি তার আদা।
তুলসি পাতা মেথি
বিশ্বজোড়া খ্যাতি।
লবঙ্গ তেজপাতা
ফুসফুস হলে ব্যথা।
এলাচি দারচিনি
খাবে প্রতিদিনই।
বাষ্প পানির ভাঁপ
শুকনো কাশি মাফ।
করলে বেশি দান
শান্তি পাবে প্রাণ।
ছড়াটি প্রকাশের পর ১০ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক মন্তব্য পড়েছে। যেখানে এই জাদুকর ভেসেছেন প্রশংসার জোয়ারে। ছড়াটি সম্পর্কে সরাসরি কোনও মন্তব্য পাওয়া না গেলেও জানা যায়, গেল তিন সপ্তাহ ধরেই তিনি অবস্থান করছেন নিজ বাসায়। আছেন নিরাপদে। মেনে চলছেন করোনা মারার জাদু!

করোনা বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া তার একটি মন্তব্য এমন, ‘আমরা দুঃসময় পার করছি। অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে আছি। এ সময়টায়ও যেন আমরা আনন্দে পার করতে পারি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চলতে হবে নিয়ম মেনে। শরীরে গড়ে তুলতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আমরা যেন আতঙ্কিত হয়ে না পড়ি। যা কিছুই হোক না কেন আমরা যেন মেনে নিতে পারি, সেই মানসিক শক্তি ধারণ করতে হবে। মরার আগে মরে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। মনে রাখতে হবে, আমরা যুদ্ধজয়ী জাতি। যুদ্ধের ময়দানেও আমাদের মনে একটা আনন্দ ছিল—আমরা দেশের জন্য লড়ছি। আমরা ন্যায়ের পথে আছি। আমরা সেই যুদ্ধে জিতেছি। মনে জোর আর সচেতন থাকলে এবারও আমরা জিতে যাবো।’

মঞ্চে জাদু দেখাচ্ছেন জুয়েল আইচ (ডানে)পুরনো ফাইল থেকে জানা যায়, ছোটবেলা বাড়িতে বেদেবহর এসেছিল, তাদের কাছেই প্রথম জাদু দেখে ভালো লেগে যায় জুয়েল আইচের। সেই ভালো লাগা ভালোবাসায় পরিণত হয় বানারীপাড়া সার্কাস দলের এক জাদুকরের গলা-কাটার জাদু দেখে। পরে ওই জাদুটি এক বন্ধুর ওপর প্র্যাকটিস করে কিছুটা সফলও হন। জাদুর প্রতি তার ভালোবাসাটা উন্মাদনায় পরিণত হয় সিরাজগঞ্জের আবদুর রশিদের জাদু দেখে, আর বন্দে আলী মিয়ার রূপকথা পড়ে।
এরপর একটু একটু করে জাদু শিখতে লাগলেন, বিভিন্নজনের কাছে। তার বিখ্যাত জাদু—কাগজ থেকে ডলার বানানো, চোখ বেঁধে গাড়ি চালানো, কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া লাগানো ইত্যাদি।
জুয়েল আইচ মঞ্চে প্রথম জাদু প্রদর্শন করেন ১৯৭২ সালে। তারও আগে দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। জগন্নাথ কলেজের ছাত্র সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নেতৃত্বে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।
দেশের শিশু-অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ইউনিসেফের অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করছেন লম্বা সময় ধরে।