ব্যর্থতার দায় নিয়ে টেলিপ্যাব থেকে ইরেশ-সাজুর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত!

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ইরেশ যাকের ও সাজু মুনতাসিরটেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব) থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সভাপতি ইরেশ যাকের ও সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির। দুজনেই মনে করছেন, উক্ত পদে তারা ব্যর্থ।

বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ইরেশ যাকের নিজেই। তার ভাষায়, ‘আই হ্যাভ সাবমিটেড মাই রেজিগনেশন।’
অন্যদিকে টেলিপ্যাবের একাধিক সদস্য থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এরমধ্যে সংগঠনটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দুজনই নিজেদের পদত্যাগ সিদ্ধান্তের কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ঘটনাটি শনিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় ঘটেছে।
কিন্তু দেশ ও ইন্ডাস্ট্রির এই ক্রান্তিকালে টিভি মিডিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংগঠন টেলিপ্যাবের শীর্ষ দুই নেতা কেন এমন হঠাৎ সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন? সেটি আবার টিভি সেক্টরের শুটিং নিষেধাজ্ঞায় শিথিলতা ঘোষণার পরদিনই!
এমন প্রশ্ন, বিস্ময় এবং নানাবিধ গুঞ্জন মিডিয়ার বাতাসে ভাসছিল গেল দুদিন ধরেই। অনেকেই বলছেন, জাহিদ হাসান ও শহীদুজ্জামান সেলিমের মতো অভিনেতা-নির্মাতাদের আইন অমান্য করে শুটিং করা, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনও সিদ্ধান্তে না যেতে পারা, হঠাৎ শুটিংয়ে শিথিলতার সিদ্ধান্ত দেওয়া- মূলত এসব বিষয়ে মেনে নিতে না পেরেই ট্যালিপ্যাবের দুই প্রধান পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। এবং এসব জটিলতা সুরাহা করতে পারেননি বলেই নিজেদের ‘ব্যর্থ’ বলে দাবি করেন নিজেদের।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় টেলিপ্যাবের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়া ইরেশ যাকেরের পদত্যাগপত্র ছিল অনেকটাই আবেগতাড়িত। তিনি লিখেছেন, ‘একটি সংগঠনের নেতৃত্ব কতটা সফল সেটা বোঝা যায় সদস্যদের প্রতিক্রিয়া থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ শুটিংয়ে শিথিলতার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকেও বলা হচ্ছে আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে করা হয়েছে। শহীদুজ্জামান সেলিমসহ অন্যদের বিষয়ে বিচার এখনও হয়নি, সে বিষয়েও আমাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ ওঠার কারণ হিসেবে আমি দেখছি নেতৃত্ব সংকট। আমার নেতৃত্ব যদি সঠিকই হতো তাহলে তো এত প্রশ্ন উঠতো না। এই দায় কাঁধে নিয়েই আমি অব্যাহতি নিলাম। তবে এই সংগঠনের প্রতি আমার সমর্থন, সহযোগিতা সব অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে সভাপতির এমন সিদ্ধান্ত আর লম্বা আবেগঘন পদত্যাগপত্রের প্রত্যুত্তরে হোয়াটসঅ্যাপেই টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির ছোট্ট করে জানান, ‘সভাপতির বক্তব্যের সঙ্গে আমিও সহমত পোষণ করে পদত্যাগ করলাম। টেলিপ্যাবের জয় হোক।’
কিন্তু ভার্চুয়াল এই আবেগঘন পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হলো? এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইরেশ যাকের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো পদত্যাগপত্র দিয়েছি। এখন এটা কমিটির আলোচনার টেবিলে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

১৭ মে থেকে বাধাহীন শুটিং, থাকছে ছয় শর্ত
এদিকে টেলিপ্যাবের এমন হঠাৎ জোড়া পদত্যাগের বিষয়ে ভালোই প্রতিক্রিয়া উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সংগঠনটির অন্যতম সাধারণ সদস্য আনজাম মাসুদ দুই নেতাকে ফেরার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‌‘স্মরণকালের ভয়াবহ এই সংকটাবস্থায় টেলিভিশন মিডিয়ার প্রধান সংগঠন থেকে আপনাদের (ইরেশ-সাজু) পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে মনোবল। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আপনারা প্রত্যাহার করুন।’
আবার অনেকেই বলছেন, দেশের দুই শীর্ষ অভিনেতা-নির্মাতার অপরাধের বিষয়ে কোনও কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণেই এমন অস্থিরতা সৃষ্টি। ১৭ মে থেকে শুটিংয়ে শিথিলতা আনার বিষয়েও আপত্তি ছিল টেলিপ্যাবের দুই কর্তার। সেটিও রক্ষা করতে পারেননি আন্তসংগঠনের ১৫ মে’র বৈঠকে।


এদিকে খবর মিলছে, টেলিপ্যাবের পথ ধরে পদত্যাগের খবর আসতে পারে ডিরেক্টরস গিল্ডসহ অন্যান্য সংগঠন থেকেও।