কোদালা চা বাগানে নওশাবার জীবন যেমন...

কোদালা চা বাগানে কাজী নওশাবা আহমেদচট্টগ্রামের কোদালা চা বাগানে শ্রমিকের চাকরি নিয়েছেন অভিনেত্রী নওশাবা। রোজ আয় ১২০ টাকা। রাতভর আবার নাচতে হয় বাগানের ম্যানেজারের বাসায়!

৬ নভেম্বর থেকে তিনি এই রুটিনের মধ্যে আছেন। বাগান থেকে মুঠোফোনে জানালেন, সময়টা তার মোটেই ভালো যাচ্ছে না। চা শ্রমিকদের জীবনের সঙ্গে যতো মিশছেন, ততোই মানসিক কষ্টে আচ্ছন্ন হচ্ছেন।
কাজী নওশাবা আহমেদের নতুন এই অভিজ্ঞতার কারণ চলচ্চিত্র ‘ছায়াবৃক্ষ’। ৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামের ঐ বাগানে শুরু হয়েছে টানা ২০ দিনের শুটিং। বন্ধন বিশ্বাসের পরিচালনায় এই ছবির পুরোটাজুড়ে থাকবে চা শ্রমিকদের জীবনের গল্প। যে গল্পের প্রধান জুটি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন অপু বিশ্বাস ও নিরব হোসাইন।
অন্যদিকে নওশাবার বিপরীতে নায়ক হিসেবে থাকছেন ছোট পর্দার সুমিত। সরকারি অনুদান পাওয়া এই ছবির অন্যান্য চরিত্রে আরও আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, সুস্মি রহমান, ইকবাল আহমেদ, বড়দা মিঠু, রানা প্রমুখ।
নওশাবা বলেন, ‘সময় খুব কম পেয়েছি প্রস্তুতির। ৩ নভেম্বর চুক্তিবদ্ধ হই। ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম চলে আসি। ৬ তারিখ থেকে টানা শুটিং হচ্ছে। ফলে চলতি পথেই ইউটিউব দেখে খানিক অভিজ্ঞতা নিতে হলো চা শ্রমিকদের। এখানে এসেও চেষ্টা করছি সরাসরি ওদের কাছ থেকে শেখার। আমি আসলে কাজটি নিয়ে রোমাঞ্চিত। আবার বিষণ্ন-ও। কারণ, শ্রমিকদের এই কষ্টের জীবন অমানবিক।’

১১ বছরের পুরনো স্মৃতি নিয়ে দুজনার চট্টগ্রাম উড়াল!

নওশাবার মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা তিন−‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘স্বপ্নের বাড়ি’ ও ‘ভুবন মাঝি’। আবার মুক্তির মিছিলে থাকা ছবির সংখ্যাও একই−‘আলগা নোঙর’, ‘চন্দ্রাবতী’ ও ‘নাইনটি নাইন ম্যানশন’। ‘ছায়াবৃক্ষ’ তার ক্যারিয়ারের ‘শুভ সাত’ হলেও, এটিকে তিনি অন্য বিবেচনায় প্রথম সিনেমা হিসেবে নিয়েছেন।
তার ভাষ্যে, ‘এর আগে আমি যে ক’টা ছবি করেছি, তার সবই ছিল চেনা-জানা পরিবেশের মধ্যে। চরিত্রগুলোও অলমোস্ট জানা ছিল। তবে এবারই প্রথম কাজ করছি পুরোপুরি এফডিসি ঘরানার ইউনিটে। বন্ধন দা সেখানকার নামকরা একজন নির্মাতা। তিনি আমাকে যে পছন্দ করেছেন, এটাই বড় বিস্ময়। কারণ, উনাদের সঙ্গে তো আমার কাজই করা হয়নি, পরিচয় দূরের কথা। ফলে এই বিষয়টি আমার জন্য আনন্দের এবং চ্যালেঞ্জেরও। উনাদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে কাজটি সঠিকভাবে শেষ করতে চাই।’
কোদালা চা বাগানে কাজী নওশাবা আহমেদ‘ছায়াবৃক্ষ’তে নওশাবাকে দেখা যাবে একসঙ্গে দুটি চরিত্রে। রোজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চা পাতা তোলেন। সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় সারা রাত তাকে নাচতে হয় ম্যানেজারের ঘরে! এভাবে একটা সময় নওশাবা স্বপ্ন দেখেন চা বাগানের জাল ছিঁড়ে বড় নৃত্যশিল্পী হওয়ার। কিন্তু সেই জাল ছেঁড়া তো সহজ কাজ নয়।
নওশাবা বলেন, ‘১৯২১ সাল থেকে এই শ্রমিকরা যে আন্দোলন শুরু করেছে, তা ভেতরে ভেতরে আজও বহমান। ৪০ টাকায় শুরু করে এখন তাদের শ্রমমূল্য ১২০ টাকা। নেই পড়াশুনার সুযোগ। পুরো অন্ধকার একটা জীবন। আমার চরিত্রটি সেই অন্ধকার ভেদ করতে চায় নাচের মাধ্যমে। চিত্রনাট্যে এমনটাই আছে, পর্দায় কতোটা দেখাতে পারি−সেটাই বিষয়।’