জোগজা-নেটপ্যাক উৎসবে ‘মায়ার জঞ্জাল’

একটি দৃশ্যে ঋত্বিক চক্রবর্তীইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য জোগজা-নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ১৫তম আসরে আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘মায়ার জঞ্জাল’ (ডেব্রি অব ডিজায়ার)। এশিয়ান পার্সপেক্টিভস বিভাগে দেখানো হবে এটি।
২৫ থেকে ২৯ নভেম্বর জাকার্তায় বসছে এবারের আসর। ‌‘মায়ার জঞ্জাল’-সহ এতে ২৯ দেশের ৭১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য আর ৫৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্থান পাচ্ছে। উৎসবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বাংলা ট্রিবিউন।
এ প্রসঙ্গে ছবিটির অন্যতম প্রযোজক জসীম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এশিয়ান পার্সপেক্টিভস হলো উৎসবটির প্রধান প্রতিযোগিতা বিভাগ। তবে করোনার কারণে এ বছর সকল বিভাগই প্রতিযোগিতার বাইরে। এশিয়ান সিনেমার আগামী প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান পরিচালকদের ছবি জায়গা দেওয়া হয় এই বিভাগে। সাংহাই উৎসবে আমাদের ছবি দেখে জোগজা-নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ আগ্রহ দেখিয়েছে। এজন্য আমরা আনন্দিত।’
২০০৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জোগজা-নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ছবি উপস্থাপন করা হয় এতে। শুরু থেকে ইউনেস্কো সমর্থিত নেটপ্যাকের (নেটওয়ার্ক ফর দ্য প্রমোশন অব এশিয়ান সিনেমা) সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপন করে কর্তৃপক্ষ। বার্লিন, লোকার্নো, কার্লোভি ভ্যারি, রটারডাম, বুসানসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন উৎসবে এশিয়ান ছবিকে পুরস্কার দিয়ে থাকে নেটপ্যাক।
এর আগে চীনের সাংহাই ও রাশিয়ার মস্কোতে অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়েছে ‘মায়ার জঞ্জাল’। সম্প্রতি ছবিটির আন্তর্জাতিক সাফল্য উদযাপন করলো ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ছবিটিকে কেন্দ্র করে নিজেদের দূতাবাসে ঘরোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ও দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে ছবিটির বাংলাদেশি প্রযোজক জসীম আহমেদ বলেন, ‘সিনেমা ও পপকর্নসহ রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে একটি ভালো সন্ধ্যা কাটলো। হাইকমিশনার ও ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালকের উদ্যোগে এটি ছিল একটি সৌজন্য আয়োজন। এতে আমরা সম্মানিত। যেহেতু ছবিটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনা, ফলে বলা যায় আন্তর্জাতিক সাফল্যের অংশীদার দুই দেশই। কীভাবে বাংলা ভাষার সিনেমায় দুই দেশের অংশীদারিত্ব আরও বাড়ানো যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা ও বাধাগুলো দূর করতে তার জায়গা থেকে করণীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
আরেকটি দৃশ্যে অপি করিম‘মায়ার জঞ্জাল’-এর মাধ্যমে ১৫ বছর পর বড় পর্দার জন্য কাজ করলেন অপি করিম। ছবিটিতে তার চরিত্রের নাম সোমা। মেয়েটি কলকাতার। সে বিবাহিতা। স্বামী আর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। তবে স্বামী বেকার। এ কারণে সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে চাকরি করে সোমা। তার স্বামী চাঁদু চরিত্রে আছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী।
কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটগল্প অবলম্বনে সাজানো হয়েছে ছবিটির চিত্রনাট্য। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের নাট্যদল প্রাচ্যনাটের সোহেল রানা (সত্য), কলকাতার পরাণ বন্দোপাধ্যায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষ (বিউটি) ও ব্রাত্য বসু (গণেশ বাবু)। ছবিটির শুটিং হয়েছে ঢাকা ও কলকাতায়।
‘মায়ার জঞ্জাল’ পরিচালনা করেছেন ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী। ২০১৩ সালে ‘ফড়িং’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন তিনি। এরপর টেলিভিশনের জন্য ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ ও ‘ভালোবাসার শহর’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি পরিচালনা করেন। পাঁচ বছর পর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনায় ফিরলেন কলকাতার এই প্রশংসিত নির্মাতা।
ছবিটি প্রযোজনা করেছেন জসীম আহমেদ। সহযোগী প্রযোজক হিসেবে আছে কলকাতার ফ্লিপবুক।