খুঁজে কি আর পাওয়া যায়, যে যায়- যায়। এটিএম নিজেও হাসতে হাসতে বলে গেছেন মৃত্যুর ক’দিন আগে, ‘এই যে তোমরা আমার মৃত্যু নিয়ে গুজবের নামে মজা করছো বারে বার। যেদিন সত্যি সত্যি চলে যাবো- পারলে আটকে রেখো। বাঁচার গুজবটা ছড়িয়ে দিও! দেখবো কতোটা পারো।’
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের শীর্ষ নেতা থেকে প্রায় সব সংগঠন। দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে ছুটে গিয়েছেন নানা স্তরের শিল্পী-কুশলী ও সাধারণ। সেই ভিড়ে কথা বলেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম।
এই শিল্পী আরও বলেন, ‘এমনকি গতকালও (শুক্রবার) তিনি একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানারে ফুল তৈরি হয়েছে কিনা এই খবর নিয়েছেন। শুধু অভিনেতা নন, আমরা একজন আপাদমস্তক সংস্কৃতিকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টকেও হারালাম।’
দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী আনোয়ারা বলেন, ‘উনি সাধারণত ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। খারাপ মানুষের চরিত্রে। বাস্তবে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। উনার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তা বলে শেষ করা যাবে না। উনার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’
স্মৃতিকাতর এই অভিনেতা-নির্মাতা আরও বলেন, ‘সেটাই শেষ দেখা। হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না কিন্তু যে দোয়া উনি করেছেন সেটা যতদিন বেঁচে থাকব ভুলতে পারবো না। চাচা, মহান আল্লাহ আপনাকে বেহেস্তবাসি করবেন, আপনার মতো একজন ভালো মানুষের জন্য আমাদের দোয়া অবিরাম।’
মৃত্যুর গুজবের প্রসঙ্গ টেনে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সত্যটা হলো। এটিএম ভাই চলে গেলেন। আর হলো না দেখা। কতো সময়, কতো স্মৃতি আমাদের। আবেগতাড়িত হচ্ছি খুব। অপার শ্রদ্ধা। শান্তিতে থাকুন আপন মানুষ।’
অভিনেত্রী তারিনের সঙ্গে এটিএম শামসুজ্জামানের সম্পর্ক ছিলো অনেকটাই আত্মিক ও পারিবারিক। মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসলেন তিনিও। যিনি কিছুদিন আগে হারালেন নিজের বাবাকে।
তারিন বলেন, ‘শুধু অভিনয় নয়, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল একই সংগঠনের (বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ) হয়ে কাজ করার। একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়েও তাঁর যে কতো পরিকল্পনা ছিলো। অসুস্থ, তবুও নিজে এসে কাজ করতে চেয়েছেন। তিনি কী যে স্নেহ করতেন, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমাকে মেয়ের মতো দেখতেন। দুঃখের বিষয় আমি এই ফেব্রুয়ারিতেই আমার বাবাকে হারিয়েছি, একই মাসে আমার কর্মস্থলের আরেক বাবাকে হারালাম।’
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে, কিছু বলার ভাষা নেই। তাকে ঘিরে আমাদের পরিবারের কতো স্মৃতি। কতো আনন্দের মুহূর্ত! কিছু বলতে পারছি না। গভীর শোক এবং শ্রদ্ধা জানাই।’ নায়ক ওমর সানী বলেন, ‘‘চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান ওস্তাদ। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুন। আমার অভিনীত ‘চাঁদের আলো’ থেকে শুরু করে যে সহযোগিতা আপনি করেছেন, আমি সারাজীবন ভুলবো না ।’
এদিকে এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-সহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। ফেসবুক পরিণত হয়েছে ভার্চুয়াল শোকবইয়ে।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার খানিক আগে পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। ধারণা করা হচ্ছে শনিবার ভোরে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর নিজ বাসভবনে পরিবারের সদস্যদের অজান্তে কোনও এক সময় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দেশের অন্যতম এই অভিনেতা।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন