ববিতার ভাষ্যে কবরীর সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা

টানা ১২ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। চলে গেছেন পরপারে। কিন্তু প্রতিক্ষণ তার আপডেটের জন্য টিভির দিকে চেয়ে থাকছেন তারই সহকর্মী আরেক নন্দিত অভিনেত্রী ববিতা।

শুক্রবার মধ্যরাতে (১৭ এপ্রিল) ঘুম ভেঙে জানতে পারেন প্রিয় অভিনেত্রী, অগ্রজ কবরী আর নেই। দীর্ঘ ছয় দশক পাশাপাশি কাজ করা এই দুই তারকার রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। মধ্যরাতে সেগুলোই যেন ফিরে ফিরে আসতে থাকে ববিতার ভাবনায়। নিকষ আঁধারে বারবারই ফিরে গেছেন এফডিসির দিনগুলোতে। বাংলা ট্রিবিউন পাঠকদের জন্য ঝাপসা চোখে অস্পষ্ট সেই স্মৃতিই তুলে ধরলেন এই তারকা-

কয়দিন ধরেই কবরী আপাকে নিয়ে বিভিন্ন আপডেট খুব আগ্রহ সহকারে দেখছিলাম। তিনি করোনায় আক্রান্ত, হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে- আস্তে আস্তে এমন কিছু দুঃসংবাদ আসতে লাগলো, কিন্তু আমার মনের জোর বাড়তে থাকলো। বারবারই মনে হচ্ছিল কবরী আপার জন্য এগুলো বড় কোনও বিষয়ই নয়। তিনি ঠিকই হাসিমুখে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসবেন।

গতকাল রাতে (১৭ এপ্রিল) আমার বিশ্বাস ভেঙে গেল। তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য রাত ১টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি, ঠিক তখনই একটা এসএমএস এলো- কবরী আপা নেই। আমি ভাবলাম, এটা নায়ক ফারুক ভাইয়ের মতোই হয়তো কোনও গুজব। বিশ্বাস করিনি। কিন্তু মনটা খচখচ করায় টিভিটা ছাড়লাম। তখন দেখলাম, অবিশ্বাস্য সংবাদটি- কবরী আর নেই!

কবরী আপার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক বছরের। কয়েক দশক আমরা একই জায়গায় (বিএফডিসি) কাজ করেছি। ১৯৬৯ সালে জহির ভাইয়ের (জহির রায়হান) ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির শুটিং করতে এফডিসিতে যাই, তখনই কবরী আপা রাজ্জাক ভাইকে শুটিং করতে দেখি। তাদের ‘ময়নামতি’ নামের ছবি আমি নিজে হলে গিয়ে দেখেছি। আমি উনার ভক্ত ছিলাম। তার সঙ্গে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে গিয়েছিলাম। এত এত দশকে অজস্র আড্ডায় সময় পার করলেও তার সঙ্গে কাজ করেছি মাত্র দুটি ছবিতে। এরমধ্যে ‘সোনার হরিণ’ সিনেমায় প্রথম কাজ করি (পরিচালক সিরাজুল ইসলাম)। এতে অনেক তারকাই ছিলেন (কবরী, শাবানা, ববিতা, রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, সুচরিতা)। তবে আমাদের শুটিং হয়েছিল আলাদা।

সর্বশেষ কাজ করি ‘রাজা সূর্য খাঁ’ ছবিতে। তখন কবরী আপা সংসদ সদস্য। ছবির পরিচালক গাজী মাহবুব বললেন, ‘আমি চাচ্ছি, আপনারা দু’জন কাজটা করেন।’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা, আমি নিজে কবরী আপাকে ফোন দিচ্ছি।’

আমি ফোন দিয়ে বললাম, ‘আপা আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।’ তিনি বললেন, ‘কী বলো!’

- আপনি এই ছবির জন্য সিডিউল দেন, আমিও দেই। দুজনে একসঙ্গে কাজটা করি।
- তুমি বলছো কাজ করতে? ঠিক আছে।
- আমি জানি, আপনি অনেক ব্যস্ত। নারায়ণগঞ্জে যেতে হয়, কাজ করতে হয়। তবে আপনার এ কাজটা করতে হবে।

একাজ করার সময়ই অনেক আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়। আমরা যেন পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যাই। কত শত স্মৃতি, আলোচনা!

সর্বশেষ রাজ্জাক ভাই যখন আমাদের ছেড়ে চলেন গেলেন, তখন এফডিসিতে আবার দেখা হয়েছিল কবরী আপার সঙ্গে। আর এখন তো তাকে দেখতে কোথাও যাওয়া হলো না। এভাবে বিদায় নেবেন প্রিয় কবরী আপা- তা ভাবিনি।