বাবা দিবসে বিশেষ

‘বাবা আমাকে নিয়ে একটু ভয় করতেন’

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে ধরা হয় বাবা দিবস। সেই হিসাবে আজ, ২০ জুন বিশ্ব বাবা দিবস। বিশেষ এই দিবসে বাংলা ট্রিবিউন জানতে চেয়েছে বাবাকে নিয়ে ক’জন তারকার মনের কথা। এখানে উল্লেখ থাকলো সংগীতশিল্পী ইমরানের অনুভূতি—

ছেলের সেলফিতে বাবাছোট থাকতে আমরা সবাই হয়তো বাবাকে (মোজাম্মেল হক) ভয় পেতাম। আসলে শাসন ছিল। থাকেই। এখন বুঝি, এটার দরকার হয়।

যেমন, এমনও হতো বাসায় আম্মার কথা আমরা কেউই শুনতাম না। দেখা গেলো আব্বা আসার শব্দ পাওয়া মাত্র আমরা সবাই বই নিয়ে পড়তে বসে যেতাম। বাবা আম্মাকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আগে থেকেই পড়ছে কিনা।’ আম্মা একটু প্রশ্রয় দিয়ে বলতেন, ‘হ্যাঁ, আগে থেকেই পড়ছে।’

এমন খবরদারি, শাসনটা দরকার। নইলে হয়তো পথ হারিয়ে ফেলতাম।

আমি যখন ক্লাস সিক্স-সেভেনে তখন বেশ ভালো ছাত্র ছিলাম। বাবা আমাকে নিয়ে একটু ভয় করতেন। ভাবতেন, গানের কারণে আমি না আবার বিগড়ে যাই, আদর্শচ্যুত হই। তাই গান-বাজনাকে অতটা সমর্থন করতেন না।

একবার আমাদের এলাকা যাত্রাবাড়ীতে একটি অনুষ্ঠান হলো। সেখানে এলাকার এমপি মহোদয়, স্কুল প্রধানসহ সবাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত। সেখানে আমার গান শুনে চারদিকে প্রশংসার বান! সবাই মঞ্চে উঠে এলেন। এমপি সাহেব আমাকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিলেন। ঘোষণা দিলেন, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের পড়াশোনার কোনও খরচ লাগবে না। এটা আমার জন্য উপহার।

সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাবাকে বিষয়টি বেশ প্রভাব ফেলে। তিনি গানের প্রতি আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন। উপলব্ধি করেন, সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণও শিশুর পড়াশোনা ও বিকাশে আরও ভূমিকা রাখে।

এরপর বাবা নিজেই আমাকে তানপুরা কিনে দিয়েছেন।

গান থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ভাগ করে নিচ্ছিলেন বাবা-মায়ের সঙ্গেবড় হওয়ার পর বাবার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিশেষ করে আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিলে বাবা প্রথমে ভেবে দেখতেন। কিছুটা সময় পার হওয়ার পর দেখেছি পরিবারে আমি ছোট হলেও তিনি আমার সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।

এই যে এখন বাবা নেই (১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে মারা যান), তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে মিস করি। কোনও কাজ, সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বুঝতে পারি তিনি যা ছিলেন তা হলো সুবিশাল বৃক্ষ। সব চাপ সামলে তিনি আমাদের সুস্থির রাখতেন। এখনও কোনও দায়িত্ব নিতে গেলেই এই বটবৃক্ষ মানুষটাকে ভীষণ মিস করি।

অনুলিখন: ওয়ালিউল বিশ্বাস