আর্টসেলের লিংকনকে নিয়ে স্ত্রীর আবেগঘন পোস্ট

২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট বিয়ের করেন দেশের জনপ্রিয় হেভি মেটাল ব্যান্ড আর্টসেলের গায়ক লিংকন ডি’কোস্টা। স্ত্রী মিমোসা লিমু হাওলাদার।

তবে তাদের বিয়েটা সহজ-সরলভাবে হয়নি। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে লিমু বিয়ে করেন ১৫ বছরের বড় লিংকনকে। ছিল না দুই পরিবারের সম্মতিও। এমন কি বেশি ওজন হওয়ায় নানা বৈরি মন্তব্যের মুখে পড়তে হয়েছে এই গায়ককে। সেগুলো নিয়েই আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন মিমোসা। গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে তিনি নিজের পেজে প্রোফাইলে অপকটে বলেন পুরনো কথাগুলো। সাবধান করেন আশেপাশের মানুষদের।

তার লেখা আবেগঘন সে পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো-‘‘আমার আর লিংকনের বিয়েতে আমার পরিবার থেকে কারো সম্মতি ছিল না। আমি কোর্ট ম্যারেজ করার আগে আমার বাড়িতে জানিয়েছিলাম, আমি কাকে বিয়ে করতে চাই। রাজি না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় ছিল একটা সাধারণ পরিবারের জন্য। আমি নিজেও প্রথমে রাজি হইনি, যখন লিংকন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এমনকি আমি আর আমার বান্ধবী হাসাহাসি করেছি, মানুষ এত মোটা হয় কীভাবে! ১২৩ কেজি ওজন! আবার আমার চেয়ে ১৫ বছরের বড়!

কোনোভাবেই রাজি ছিলাম না। কিন্তু মানুষটা আমার খুব কেয়ার করতো। আমি যে হোস্টেলে থাকতাম সেখানে খাবার একটুও ভালো ছিল না। সে বরাবরই চাইতো, আমার জন্য রান্না করে পাঠাতে। আমি না করতাম। আমার এত বেশি কেয়ার করতো যা আমার বাবা-মা ছাড়া কারও কাছে কোনোদিনই পাইনি। বেশিরভাগ জায়গায় আমি সবার কাছে অপ্রিয়। আত্মীয়স্বজনের কাছে ছাই ফেলতে ভাঙাকুলো। আমি এটা বরাবরই বলি। এবং সব বুঝেও যথাসাধ্য চেষ্টা করি কেউ সাহায্য চাওয়া মাত্র সাহায্য করতে। কিন্তু তবুও কারও প্রিয় হতে পারিনি; যতটা কমসময়ে প্রিয় হয়েছি লিংকনের কাছে।

যাই হোক, কথা বলতে বলতে তার জীবনের দুঃখের কাহিনিগুলো জানলাম। বিয়ে করার কথা জিজ্ঞেস করলে বলল, ‘আমি তো মোটা, কে বিয়ে করবে, তুমি নিজেও তো রাজি হওনি!’ কষ্ট চেপে রাখতে ড্রিংক করতো প্রতিরাতে। আপনাদের এই সদা হাস্যোজ্জ্বল , যেখানে যায় সবাইকে হাসায়, স্টেজে গেয়ে কত আনন্দ দেয় সবাইকে তার মনে কতটা কষ্ট ছিল কে তার খোঁজ জানে! মোটা হওয়াটা কেউ ইচ্ছে করে হয় না, কেউ খুশিতে বা খেয়েই শুধু মোটা হয় না, ওবেসিটি নামে একটা রোগ আছে যে কারণে মানুষ মোটা হয়।

আমার মনে খুব নাড়া দেয় মানুষটার কষ্টের কথাগুলো আর আমার প্রতি তার ভালোবাসা, যত্ন। আর যে কষ্টের কারণে একটা মানুষ প্রতিটা দিন ড্রিংক করে নিজের জীবনটা শেষ করে দিচ্ছিল তা ছিল- একাকীত্ব। আমি ঠিক করলাম, আমি এই মানুষটার জীবন এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেবো না। আমার সঙ্গ যদি তাকে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারে তাহলে তাই হোক। আর এতটা ভালো আমাকে কেউ বাসবে না। সত্যি বলতে, আমি নিজেও কখন মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছি বা তার প্রতি আমার একটা অন্যরকম ভালোবাসা তৈরি হয়েছে- বুঝতে পারিনি। আমার পরিবারকে তার কথা জানালাম, কেউ মানবে না জেনেও। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিলাম কোর্ট ম্যারেজের। কারণ এছাড়া কোনও উপায় ছিল না আমাদের হাতে। হ্যাঁ, মোটা জেনেই আমি তাকে ভালোবেসেছি। কারণ এই মোটা মানুষটাই আমাকে আগলে রেখেছে।

কিন্তু আপনারা অনেকেই যখন আমাকে বলেন, ‘ভাবি/বৌদি, লিংকন ভাইকে কম খেতে বলেন, কন্ট্রোল করতে বলেন, ভোঁটকা, ডায়েট করতে বলেন, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে বলেন’- এসব আসলে আপনাদের লিংকনের প্রতি কেয়ার না। এগুলো একপ্রকার বডি শেইমিং। বডি শেইমিংয়ের মতো জঘন্য কাজ আপনারা করেন, যেটা আমি নিজেও করতাম যখন বুঝতাম না। এখন লিংকনের সাথে মেশার পর বুঝি, একটা মানুষ ইচ্ছা করে মোটা বা চিকন, ফর্সা বা কালো, বেটে বা লম্বা হয় না, আমরা কেন তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করব?

আপনারাই বলেন, ‘লিংকন আপনাদের লিজেন্ড’; আবার নিজেরাই ওর মোটা হওয়া নিয়ে হাসাহাসি করেন! একেকজন তো উপদেশ দেন এমনভাবে যেন মোটা হওয়াটা ইচ্ছাকৃত!

শুধু লিংকন না আমার এই পোস্টের পর আশাকরি কেউ আর মোটা, চিকন, বেটে, লম্বা, ফর্সা, কালো মানুষগুলোকে হাসি বা উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে ছোট করবেন না। কারণ তারা নিজেরাই জানেন তাদের কী করা উচিত। সবাই এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট; তাই আমরা সবাইকে সম্মান করতে শিখি প্লিজ। আর প্রতিটা মানুষই কারও না কারও ভালোবাসার মানুষ। আর ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কেউ যখন হাসাহাসি করে তখন সেটা ভালো লাগে না।

পরিবার ও স্ত্রী সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীলতার কথা বলতে গেলে আমি বলব, আমার আব্বু আর লিংকন এই দুইজন সবচেয়ে সেরা। আর আমার আব্বু সংসার জীবনে লিংকনের আইডল। তাই দয়া করে আমাদের পরিবার, আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা করার চেয়ে আপনাদের নিজেদের জীবন নিয়ে চিন্তা করাটাই কি শ্রেয় নয়!

আর বলেছিলাম শুরুতে আমার সঙ্গ লিংকনের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে এদিকে আমিও সাকসেসফুল। আর লিংকনও সবসময়ই এতো বেশি ভালোবাসে আমাকে, নিজের চেয়ে বেশি ভাবে আমাকে নিয়ে এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই আমার। একটা মানুষ ভালো না বাসলে কোনোদিনই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে না কারও জন্য।

মোটা চিকন না দেখে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দেখুন। যাকে ভালোবাসবেন, প্রাণখুলে ভালোবাসুন। কোনও অবস্থায় যেন আপনার ভালোবাসার মানুষকে কেউ একটুখানি খোঁচা দিয়ে বা অপমান করে কথা বলতে না পারে।’’