হবু বর প্রসঙ্গে একান্ত আলাপে মিম

‘পরিচয়ের দিন ও নার্ভাস ছিল, এনগেজমেন্টের দিন আমি’

ঢাকাই সিনেমার নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের জন্মদিন ছিল বুধবার (১০ নভেম্বর)। এদিন রাত ৯টা ১৫ মিনিটে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে ‘সারপ্রাইজ’ দেন তিনি। উন্মোচন করেন হবু বরসহ নিজের ছবি! জানান, ব্যাংক কর্মকর্তা সনি পোদ্দার হতে যাচ্ছেন তার জীবনসঙ্গী।

অন্যদিকে ঠিক একই সময়ে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বেশ পরিকল্পিতভাবে এনগেজমেন্ট সম্পন্ন করেন তারা। তবে এ দুটি ঘটনা আয়োজনের জন্য ছয় বছরেরও বেশি সময় নিয়েছেন তারা। আছে নানা গল্পও। পুরোটা শোনা যাক মিমের মুখেই-

বাংলা ট্রিবিউন: এনগেজমেন্ট দিয়েই শুরু করা যাক। বেশ বড় আয়োজন, বিয়ে করার মতো অনুভব হচ্ছিল কিনা! শুনলাম, বেশ নার্ভাস ছিলেন!

বিদ্যা সিনহা মিম: হ্যাঁ, বিয়ের মতোই নার্ভাস। খুব নার্ভাস ছিলাম। কারণ, পরিকল্পনা ছিল আমরা যখন অনুষ্ঠান শুরু করবো, তখনই আমার ও সনির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করবো। ছবিটা দেওয়ার পর আরও বেশি নার্ভাস ফিল হচ্ছিল। আমাদের যে ফটোগ্রাফার ছিলেন, তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাকে জিজ্ঞেসও করে বসেন। তখন ভাবছিলাম, সবাই এখন ছবিটা দেখছে। মনে হচ্ছিল, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

বাংলা ট্রিবিউন: ছয় বছরের সম্পর্ক আপনাদের। পরিচয়, পরিণয়- মাঝে বন্ধুত্ব। কেন মনে হলো বন্ধু থেকে সনি পোদ্দার প্রেমিক বা স্বামী হতে পারেন? কোন গুণটা বেশি টেনেছে?

বিদ্যা সিনহা মিম: প্রথমত, থাকে না, কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বললে ভালো লাগে। সনি তেমনই একজন। সে খুবই শান্ত স্বভাবের। ঝামেলার মধ্যে যায় না। আমাদের রিলেশনে কিন্তু ঝগড়াঝাটি নেই। রাগারাগি কবে করেছি ঠিক মনেও নেই। আসলে সে আমাকে খুব ম্যানেজ করে ফেলতে পারে; মেনে নেয়। আমি রাগার কোনও পথই পাই না। একটা রিলেশন টেকানোর জন্য যে বিষয়গুলো থাকে, সবই তার মধ্যে আছে। একটা কথা আপনি বলছিলেন না, কোন গুণটা বেশি টেনেছে? সনির একটা গুণ হলো, সে কিন্তু হাসাতে পারে। মজা করে কথা বলতে পারে। তার কনভারসেশনের মধ্যে হিউমার ও ফান থাকতো। আমার মুড অফ থাকলেও ওর সঙ্গে কথা হলে হাসতাম। মানুষকে হাসানো কিন্তু অনেক কঠিন কাজ। তখন ভাবলাম, যে আমাকে খুশি রাখতে পারে তার সঙ্গেই থাকা উচিত।

আরেকটা বিষয়, যখন আমার ভালো লেগেছে তখনই সম্পর্কটা আরও গভীর হয়েছে। সে বেশ নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী। আমি যখন আমার কাজ নিয়ে কথা বলেছি, তখন আমার কাজের প্রতি তার রেসপেক্ট দেখে খুব ভালো লেগেছে।

এনগেজমেন্ট আসরে সতীর্থরাবাংলা ট্রিবিউন: সনির সঙ্গে পরিচয়টা কীভাবে হলো? এই যে নম্র-বিনয় ‘পাত্র’ তার সন্ধান পেলেন কীভাবে?

বিদ্যা সিনহা মিম: (হাসি) প্রথমে তো এত কিছু ভাবিনি। বন্ধু হিসেবে কথা বলা। সবাই জানেন, আমি অনেক দিন থেকেই নিজের মতো থাকি, একা একা। কাজ করি, বাসায় ফিরি- এটুকুই। কিন্তু মানুষের জীবনে তো ভালো বন্ধুরও দরকার। আমার এক বান্ধবী আমাকে সনির কথা বারবার বলতো। বলতো, ওর সঙ্গে পরিচিত হতে, কথা বলতে। সেভাবেই সনির সঙ্গে কথা বলি। তারপর বন্ধুত্ব, সেখান থেকে প্রেম। অবশেষে দুজনই পরিবারকে বিষয়টি জানাই। বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তে সবকিছু হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রথম দিনে সনি এমন কী বলেছিল- মনে পড়ে?

বিদ্যা সিনহা মিম: ছয় বছর আগে প্রথম দিন যখন কথা বলি, তখন আমি সেলিব্রেটিই ছিলাম। সনি এখন স্বীকার করবে কিনা জানি না; পল্টিও মারতে পারে! কিন্তু সেদিন সনি খুব নার্ভাস ছিল। ‘ও মাই গড, বিদ্যা সিনহা মিম আমার সঙ্গে কথা বলছে’—এমন ধরনের এক্সপ্রেশন ছিল। হয়তো কিছু দিন পর কথা বলতে বলতে নরমাল হয়েছে। আবার এনগেজমেন্টের দিন ও স্বাভাবিক থাকলেও আমার অবস্থা বেশ নার্ভাস ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি বলছিলেন, কথা বলতে বলতে আপনার ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আপনার কি কখনও পরিকল্পনা ছিল মিডিয়ার বাইরের মানুষই আপনার জীবনসঙ্গী হবে? যদি হয়, তাহলে কেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: হ্যাঁ, এটা শুরু থেকেই ভাবতাম। কারণ, আমি চাইতাম আমার যে কাজ তার বাইরের কোনও মানুষ আমার জীবনে আসুক। তবে অনেকেই মনে করেন যে নিজের কাজের জগৎ বোঝেন না, তার সঙ্গে ম্যাচিং করা কঠিন। কিন্তু সনি আসলে আমার কাজের মধ্যে কোনও ইন্টারফেয়ারই করে না। এমনকি আমিও তার কাজের মধ্যে ঢুকি না।

বাংলা ট্রিবিউন: উনার ক্যামেরা লুকও চমৎকার। কখনও কি তাকে মডেলিংয়ে পাওয়া যেতে পারে?

বিদ্যা সিনহা মিম: না, না, এটা সম্ভব না। শুরু থেকেই সে ক্যামেরা এড়িয়ে চলে। এই যে গতকাল শুট হলো- এগুলো নাকি করতে তার অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। আমার শখ ছিল যে, আমরা এভাবে বাগদান করবো। আসলে আমার শখের জন্য তার এভাবে ক্যামেরায় আসা। আমাকে সে এটাও বলেছে, ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগতই রাখতে চায়। মিডিয়াতে আসতে চায় না।

বাংলা ট্রিবিউন: শীতকালে বিয়ের ধুম পড়ে যায়। শীত তো চলে এলো। বিয়ের বিষয়ে কী ভাবছেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: না, এখন তো সম্ভবই নয়। সময় পাবো না। আর একটা অনুষ্ঠান (বাগদান) করতেই যে ধকল গেলো!

বাংলা ট্রিবিউন: সনির জন্মদিন কোন মাসে?

বিদ্যা সিনহা মিম: সেপ্টেম্বর।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার জন্মদিন ছিল গতকাল (১০ নভেম্বর), উনারটা সেপ্টেম্বরে। তাহলে বিয়েটা কি আগামী সেপ্টেম্বরেই হবে?

বিদ্যা সিনহা মিম: হা হা। এটা বেশ মজার বিষয় হলো। আসলে তো এখনও কোনও পরিকল্পনা করিনি। দেখি, অবশ্যই জানতে পারবেন। জানাবো সবাইকে।

বাংলা ট্রিবিউন: হবু জামাই সনি পোদ্দারের মন্তব্য তো এখন নিতে পারছি না। নিতে পারলে ভালো হতো। জানতে চাইতাম, মিডিয়ায় গত ছয় বছরে মিমের সঙ্গে প্রেম নিয়ে অনেকের নাম এসেছে। যখন পত্রিকায় বা সামাজিক মাধ্যমে এমন গুঞ্জন আসতো, সনি বিষয়টি কীভাবে নিতো?

বিদ্যা সিনহা মিম: সে এগুলো গায়ে মাখতোই না। বরং এটা নিয়ে উল্টো আমাকে খেপাতো, মজা নিতো আরকি। সে নিজেই মজা করতো।

বাংলা ট্রিবিউন: এবার একটু কাজের খোঁজ নেওয়া যাক। আপাতত কাজে আছেন নাকি বাগদানের জন্য ছুটি নিয়েছেন?

বিদ্যা সিনহা মিম: না, কোনও ছুটি নাই। ১৩ তারিখ থেকে সিনেমার কাজ করবো। এরপর বিজ্ঞাপনের শুটিং আছে। আমি কাজের মধ্যেই আছি। বিয়ের সময় ছুটি নেওয়ার প্ল্যান আছে।