সম্প্রতি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ঢাকাই ছবির নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু। দেশের খ্যাতনামা সব পরিচালকের ছবিতে ছোট রোলগুলোতে একসময় তাকে পাওয়া যেত। জীবন সংগ্রামে ভালো থাকতে শুধু সিনেমা-নাটকে অভিনয় নয়, পাশাপাশি নির্মাণেও যুক্ত হয়েছিলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত আর ভালো থাকতে পারেননি। করুণ পরিণতির শিকার হন।
১৯৯৮ সালে বরেণ্য নির্মাতা কাজী হায়াতের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছিলেন শিমু। ছবির নাম ছিল ‘বর্তমান’।
চলচ্চিত্র ও শিমু প্রসঙ্গে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘শিমু আমার ছবিতে কাজ করেছিল। মেয়েটা আমার চোখে ভীষণ ভালো ছিল। আমি ওকে বেশ ভালো জানতাম। প্রয়াত নায়ক মান্না ওকে আদর করতো। কিন্তু তার বস্তাবন্দি লাশের কথা শুনে তো খুব দুঃখ পেলাম। শিমু একজন শিল্পী। তীব্র ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্র এবং শিল্প অঙ্গনে কিছু করার। এভাবে বস্তাবন্দি লাশ হওয়া খুব দুঃখজনক।’
শিমুর মৃত্যুর পর তার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে কথা বলেছেন দেশের অন্যতম চলচ্চিত্র চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবু। চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদের সঙ্গে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘জামাই শ্বশুর’-এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন শিমু। যার গল্পকার ছিলেন বাবু।
এই কাহিনিকার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ছায়াছবির জন্য একজন শিল্পী প্রয়োজন, যিনি পূর্ণিমার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করবেন। তখনই হঠাৎ আমার রাইমা ইসলাম শিমুর কথা মনে পড়ে। তার কথা মনে ছিল শুধু ওর মনখোলা হাসি আর অসাধারণ ব্যবহারের জন্য। আমার বাসার সামনে রামপুরা এলাকায় থাকতো। ডাকলাম তাকে, প্রযোজক ফরহাদ ভাই আর পরিচালক শাহাদাত ভাই দেখে একনজরে নির্বাচিত করলেন শিমুকে। কয়েক দিনের মধ্যে দিনাজপুরে আউটডোর শুটিংয়ে গেলো ইউনিট, দুর্দান্ত কাজ করলো শিমু। তারপর অনেক দিনের গ্যাপ; যোগাযোগ ছিল না।’
শিমুর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে বাবু বলেন, ‘২০১৭ সালে বঙ্গতে নাটক সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিচালক বি ইউ শুভর সরবরাহ করা নাটকে দেখলাম পরিচালক হিসেবে শিমুর নাম। সাথে সাথে ফোন, উচ্ছ্বসিত হয়ে জানালো, সে এখন ভালো আছে। কাজ করছে এটিএন বাংলায়। নাটক প্রযোজনা করছে। স্বামী দুই সন্তান নিয়ে খুব সুখী। হায় রে সুখ...নিজের দুঃখটাকে সবসময় লুকিয়েছে মেয়েটা। শুধু একটু সুখের আশায়। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, শিমুর সমস্ত জাগতিক ভুলত্রুটি ক্ষমা করে, তার আত্মাকে শান্তি দিন। তাকে বেহেশত নসীব করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।’
এদিকে, আগামী ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২০২৪ সালের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মাত্র ১০ দিন আগে ১৭ জানুয়ারি উদ্ধার করা হয় সমিতির সাবেক সদস্য নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু বস্তাবন্দি লাশ। ঘটনাটি নিয়ে এফডিসিতে এখনও তোলপাড় চলছে।
১৮৪ জন চলচ্চিত্র শিল্পীর ভোটাধিকার হারানোর তালিকায় ছিল প্রয়াত এই অভিনেত্রী নামও। আর সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঙ্গে একাধিকবার দ্বন্দ্বেও জড়িয়েছেন শিমু।
অন্যদিকে, জায়েদের এমন বক্তব্যের পর মুখ খুলেছেন শিমুর সহকর্মী চিত্রনায়ক রিয়াজ।
শিমুকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘তার মৃত্যুর সংবাদ আসার পর আমরা শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছি। সে আমাদের শিল্পী সমিতির সদস্য ছিলেন। আমরা শোকাচ্ছন্ন। এটা অত্যন্ত দুঃসংবাদ আমাদের জন্য। অনেকে যারা তাকে নিয়ে রাজনীতি করার কথা বলেছেন, দায়িত্বশীল কেউ না জেনে এমন কেউ মন্তব্য করবেন না। আমরা সবাই একটা পরিবারের মতো। যখন একজন সহকর্মী খুন হয়, তখন হয়তো অন্যদের মাথা ঠিক থাকে না, বিষাদে থাকেন। তখন ইমোশনাল ব্যারিয়ার ভেঙে ফেলেন। তখন এমনটা হতে পারে।’
উল্লেখ্য, ১৭ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর থেকে রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ৪১ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী সপরিবারে ঢাকার কলাবাগান থানাধীন গ্রিন রোড এলাকায় থাকতেন। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানায়, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের কারণে শিমুকে হত্যা করেছে তার স্বামী শাখাওয়াত আলী নোবেল। এরপর শিমুর লাশ টুকরো করে বস্তায় ভরে গুম করতে সহায়তা করেছেন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ।