কাওসার আহমেদ চৌধুরী স্মরণে কুমার বিশ্বজিৎ

‌‘এমন একটি গান পেলে একজন শিল্পীর জীবনে আর কিছু লাগে না’

‘যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার’ গানটির সৃষ্টি হয়েছিল সদ্য প্রয়াত (২২ ফেব্রুয়ারি) গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখনীতে। আরেক প্রয়াত সংগীতশিল্পী লাকী আখান্দের সুরে এটি অনেকেই গেয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি শ্রোতানন্দিত হয়েছে কুমার বিশ্বজিতের গলায়।

এই শিল্পীও মনে করেন, এমন গান যেকোনও শিল্পীর জন্য পরম ভাগ্য ও আশীর্বাদের।

তাই প্রিয় গীতিকারের প্রয়াণে জানালেন শ্রদ্ধা। এ আয়োজনে গান ও গানের স্রষ্টা কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে নিয়ে কথা বললেন কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ-

গানটা আমার গাওয়ার আগেই সৃষ্টি হয়েছে। এটা লাকী আখান্দ ভাই, ফাহমিদা নবী- তারাও গেয়েছেন। তবে কেন যেন শ্রোতারা আমার গাওয়া একটু বেশি পছন্দ করেছেন।

সেটার চেয়েও বড় কথা, আমাদের স্বাধীনতাত্তোর আধুনিক বাংলা গানকে কাব্য, সাহিত্য ও অন্ত্যমিলের উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

আমাদেরকে বাংলা আধুনিক গানে গর্বিত স্থানে নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে তিনিও একজন।

যারা গানকে গর্বিত স্থানে নিয়ে যায় তারা শিল্পী বা শ্রোতার কাছে অন্যরকম মর্যাদা পায়। এই মানুষগুলো যখন চলে যায়, তখন শূন্যস্থান তৈরি হয়। আমরা প্রায়ই বলি, এই ক্ষতি পূরণের নয়। কথাটা গতানুগতিক। তবে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর জন্য সবচেয়ে যথার্থ।

মানুষ মরণশীল। মানি। কিন্তু ‘ক্ষণজন্মা’ বলে একটা শব্দ আছে। তাদের স্থান পূরণ হবে কিনা একটা হতাশাও কাজ করে।

আমার ভয় লাগে, হতাশা লাগে, যে আদৌ এমন মানুষ আসবে কিনা- যে তার স্থান পূরণ করতে পারবেন।

হয়তো কয়েক প্রজন্ম পর, আমাদের সংস্কৃতির মানদণ্ডে আমরা আরও সমৃদ্ধ হবে। আবার আদৌ হবে কিনা- এই চিন্তা আমার মধ্যে চলে আসে।

যখনই আমি মঞ্চে গান গাইতে উঠি, প্রতিটি গানের আগে তার গীতিকার ও সুরকারের নাম বলি। যখনই ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানের কথা বলি, যে আওয়াজটা পাই তা শিহরিত করার মতো। এমনকি এই গানটা গাওয়া শুরু করলে, আমাকে বেশিক্ষণ গাইতে হয় না। শ্রোতারাই পুরোটা গায়।

উচ্চ আয়ের মানুষ থেকে নিম্ন আয়ের রিকশাচালকও গানটি পুরোপুরি গায়। কাউকে ছোট করে কথাটা বলছি না। বলা এজন্যই যে, গানটার সার্থকতাটা তুলে ধরা। আবার যদি ভাবি, গানটি কিন্তু সহজ নয়। অনেক কাব্য, সাহিত্য ও অন্ত্যমিল আছে। তারপরও এটি সবার কাছে পৌঁছেছে।

আর শিল্পী হিসেবে বললে, একটা শিল্পীর জন্য এ গান অনেক ভাগ্যের বিষয়।

এমন একটি গান পেলে একজন শিল্পীর সারাজীবনে আর কিছু লাগে না। কাওসার ভাই, লাকী ভাই (সুরকার) আমার জীবনে এমন একটি গান যোগ করেছেন, এতে আমি সত্যিই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।