অভিষেকের মনে অনেক ক্ষোভ ছিল: ঋতুপর্ণা

‘অভিষেক চট্টোপাধ্যায় আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা অভিনেতা। বাংলা ছবিতে তার অনেক অবদান। এবং আমি চাই, আমাদের দর্শক যেন তাকে খুবই সম্মানের সঙ্গে মনে রাখেন। অনেক শুভকামনা যাতে দেন, যাতে যেখানেই থাকুন না কেন, ভালো থাকেন। শান্তিতে থাকেন’- এমনটাই বললেন পশ্চিমবঙ্গের চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

তিনি বলেন, ‘‘একসময় এত ছবি করেছি ওর সঙ্গে! সেই সংখ্যার হিসাব নেই আমার কাছে। অনেক ছবি, অনেক ছবি! এটুকু বলতে পারি, আমার জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ ছবি তার সঙ্গে করা। যেখান থেকে কর্মাশিয়াল সিনেমার হিটকে উপলব্ধি করলাম, গোল্ডেন জুবিলি, সিলভার জুবিলি… তার নিশ্চয়ই একটা বড় পার্ট অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। আমার এখনও মনে আছে… আমি শুনেছিলাম, ঋতুপর্ণা সুপারস্টার হয়ে গিয়েছে, ‘সুজন-সখী’ গ্রামেগঞ্জে, শহরে, শহরতলিতে, চারিদিকে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেই ছবি কত টাকার ব্যবসা করেছে, এখন ঠিক মনে নেই… তবে আমাদের প্রযোজক অসীম সরকার এসে বলেছিলেন… ‘তুমি আমার লক্ষ্মী’। অভিষেককে বাহবা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে একটা বিরাট উপহার দিলে’। ‘সুজন সখী’ আমার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের ছবি। ‘শ্বেতপাথর’র থালার পর এটা। এবং সেটা দারুণ হিট হয়েছিল। স্বপন সাহা পরিচালক ছিলেন। ‘সব সখীরে পার করিতে…’ এই গানটা আজও সকলের মুখে মুখে শোনা যায়। আমি বোধহয় মঞ্চে উঠলে প্রথমে ওই গানটাই গাই।অভিষেক চট্টোপাধ্যায় সেই ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। আমার যে ছবি জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দহন’, যাতে আমি জাতীয় পুরস্কার পাই… সেই ছবিরও কিন্তু একটা বিশাল বড় অংশজুড়ে অভিষেক রয়েছেন।’’ একই ছবিতে তারা দুজন

ঋতুপর্ণা বলেন, ‘অনেক কাজের মধ্যে একজন সরল মানুষকে আমরা দেখেছি। অন্যের উপকারে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সেটে মজা করতেন। খুব ভালো রান্না করতেন। খাবার নিয়ে আসতেন রান্না করে। পরবর্তীকালে যোগাযোগ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। যখনই আমি টেলিভিশনে একঝলক দেখতাম, মনে হত এত সুন্দর চেহারা ছিল, কেন নিজেকে আরও মেনটেন করে না। মনে হয়েছিল, ও কি অসুস্থ? শরীরটা কি ভাল নেই? কিন্তু যোগাযোগ হয়নি অনেকদিন। বহুদিন। তবে আজ (২৪ মার্চ) তার চলে যাওয়া আমাদের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। এরকমভাবেই সকলে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যেদিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, যেদিন বাংলা সিনেমা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল – যে বাংলা সিনেমা কি আর হবে? সেই সময় কিন্তু কিছু মুখ ছিলেন, যারা এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে ধরে রেখেছিল। যেমন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। আমার অনেক আগে থেকে কাজ করছেন। আমি মনে করি, যে আমাদের একটা সুন্দর গ্রুপ ছিল। সুন্দর আবহাওয়া ছিল। আমরা সকলে খুব আনন্দ করে কাজ করতাম। আউটডোরে আনন্দ হতো। আমার কাছে অভিষেকের চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের। হয়তো তার মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল। সেগুলো হয়তো জানি না, কতটা ছিল, কী ছিল… সেগুলো নিয়ে কতটা আপেক্ষ ছিল…! তবে আজকে তিনি যে চলে গিয়েছেন, যেখানে গিয়েছেন, সেখানে হয়তো অনেক শান্তি পাবেন। আমি চাইবো, যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।’