তবে ঢাকার চিত্র একটু ভিন্ন। কারণ, রাজধানীর সর্বাধিক ৯টি সিঙ্গেল স্ক্রিন আর মাল্টিপ্লেক্সে উঠেছে সিয়াম-পূজার ‘শান’। ৭টিতে শাকিব-বুবলীর ‘বিদ্রোহী’, ৬টিতে শাকিব-পূজার ‘গলুই’ এবং একটি মাল্টিপ্লেক্সে নিপা-শান্তর ‘বড্ড ভালোবাসি’।
ঈদের দিন ঢাকার প্রেক্ষাগৃহগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সিয়াম-পূজার রাজত্ব। দর্শক ছিল অন্য তিনটি সিনেমাতেও, তবে সেটি আশানুরূপ নয়। এমনকি দুই-একটি সিঙ্গেল স্ক্রিনে ‘শান’ ছবির রিপোর্টও হতাশাজনক ছিল। তবে মোটাদাগে ঈদের দিন ঢাকাই দর্শকদের প্রথম পছন্দের তালিকায় দেখা গেছে সিয়াম-পূজাকে। এরপর শাকিব-বুবলী। অন্য দুটি ছবি থেকে তেমন একটা আশার আলো মেলেনি ঈদের দিন।
দর্শনার্থী ও হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঈদের দিন প্রথম দুটি শো এমনিতেই ভাটা থাকে। সন্ধ্যার শো প্রায় হাউজফুল গেছে সব হলেই। এদিকে সিঙ্গেল স্ক্রিনে ঈদের দিন হতাশা বিরাজ করলেও মাল্টিপ্লেক্সগুলো মোটামুটি জমজমাট ছিল।
বসুন্ধরা শপিং সেন্টারে ‘গলুই’ দেখতে আসা মেহেদি বলেন, ‘বাংলা সিনেমা অনেক দিন দেখা হয় না। বন্ধুরা ঘুরতে এসে ভাবলাম সিনেমাটা দেখি- কেমন লাগে। তাছাড়া কিছুক্ষণ রিলাক্সেও সময় কাটানো যাবে এখানে। কারণ পরিবেশটা ভালো।’
এদিকে ফার্মগেটে অবস্থিত দেশের অন্যতম পুরনো সিঙ্গেল স্ক্রিন আনন্দ সিনেমা হলেও চলছে ‘শান’ সিনেমাটি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী এই হলে দর্শকের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। এই বিষয়ে আনন্দ সিনেমা হলের গেটে দায়িত্বরত আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ মানুষ আর এই পরিবেশে সিনেমা দেখতে চায় না। আর যারা এখনও এসব হলে আসে, তারা সব ধরনের ছবি দেখে না। তারা মারমার-কাটকাট অ্যাকশন ছবির দর্শক। এখন তো তেমন ছবিও হয় না।’
এদিকে ঢাকায় দর্শক টানার বিচারে দ্বিতীয় ছবি হিসেবে উঠে এসেছে শাকিব-পূজার ‘গলুই’ ছবিটি। এটি ‘শান’র সঙ্গে স্টার সিনেপ্লেক্সের চারটি শাখা এবং যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টারেও চলছে। তবে ঈদের দিন ‘গলুই’ থেকে ‘শান’র প্রতিই ঝোঁক দেখা গেছে দর্শকদের। অন্যদিকে ঢাকার হলগুলোতে ‘বিদ্রোহী’র প্রতিধ্বনি মেলেনি একদমই।
‘গলুই’ ও ‘শান’ চালানো স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘দারুণ শুভ সূচনা হয়েছে আমাদের সিনেমার। ‘শান’ ও ‘গলুই’ দুটোই ভালো যাচ্ছে। আমাদের বিদেশি ছবির সেলও ভালো। তবে আমাদের এখানে যে কয়টি বাংলা ছবি চলছে তার মধ্যে ‘শান’ প্রথম দিনে বেশি দর্শক পেয়েছে। ঈদের দিন দুপুরের শো আমরা হাউজফুল না বলতে পারলেও সন্ধ্যার শো ছিল হাউজফুল। তবে দেশের অন্য ছবিগুলোও খারাপ যাচ্ছে না। আশা করছি আগামী কয়েক দিনে ছবিগুলোর আরও দর্শক বাড়বে।’’
রাজধানীর মধুমিতা হলের কর্ণধার এবং পরিবেশক সমিতির অন্যতম নেতা ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বেশ খুশি দীর্ঘদিন পর সিনেমা হলে দর্শকদের ভিড় দেখে। তাই সোমবার (৩ মে) তার কাছে সত্যি সত্যিই ঈদের দিন মনে হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সাধারণত ঈদের দিন ১২টার শোতে দর্শক একটু কমই হয়। তার ওপর ছিল বৃষ্টি। তবে তিনটার শোতে দর্শক আসা শুরু করে। প্রায় আশিভাগ দর্শক ছিল এই শোতে। আর ইভিনিং শো আমরা হাউজফুল পেয়েছি।’
মতিঝিল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই প্রেক্ষাগৃহে চলছে ‘শান’।
বাংলা ট্রিবিউন-এর ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ঈদে এ জেলার তিনটি সিনেমা হলেই চলছে ‘বিদ্রোহী’। ঈদে চারটি ছবি মুক্তি পেলেও জেলাজুড়ে একই ছবি চালানোর বিষয়ে মধুছন্দা হলের মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘‘শেষ সময়ে এসে ছবি পাইনি। শেষমেশ ‘বিদ্রোহী’ পেয়েছি। কারণ, অন্তত শতাধিক সিনেমা হলে এই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।’’
তবে জানা গেছে, হল মালিকরা ‘বিদ্রোহী’ ছবিটি চালানোর সুযোগ পেয়েছে টেবিলমানি না দিয়েই। অন্যদিকে ‘শান’ বা ‘গলুই’ নিতে হলে তাদের গুনতে হতো অগ্রিম টাকা।