সাংস্কৃতিক উৎসবে ‘নৃত্যজয়’, নতুন মাত্রার পরিকল্পনা

চলতি বছরের ‘সাংস্কৃতিক উৎসবে’ জনপ্রিয় সংগীত আর নানা ধরনের নৃত্যের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। দেশের প্রধান এই সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে চলছে এই আয়োজন। একটানা ১১ দিন ধরে চলা এই নৃত্য জয় করেছে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মনন।

উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যেই নৃত্যশিল্পে নতুন মাত্রা যুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানা গেলো। নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীদের নবজাগরণ ও গুণগত মানোন্নয়নে বিষয়টি নিয়েও ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়া নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীদের নবজাগরণ ও গুণগত মানোন্নয়নে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি। এর অংশ হিসেবে এবারের সাংস্কৃতিক উৎসবে নৃত্য পরিবেশনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন শিরোনামে সৃজনশীল নৃত্য উপহার দিয়েছেন নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় উৎসবের সময় দুই দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই আয়োজন প্রতিভাবান শিল্পীদের পেশাগতভাবে আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলেছে।

নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় প্রতি মাসে একটি করে অনলাইন কর্মশালা করা হবে। এর ফলে বিশ্বের মূলধারার নৃত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় সকীয়তা বজায় রেখে নতুন একটি ধারা তৈরি হবে। এটি নৃত্যাঙ্গনের গুণগত মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি।

বক্তব্য দিচ্ছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ঢাকাসহ জেলায় জেলায় নৃত্যালেখ্য, নৃত্যনাট্য এবং দলীয় ও একক নৃত্য পরিবেশনা। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদেরও মানোন্নয়নে নানা আয়োজন নেওয়া হচ্ছে। এমন উদ্যোগে নৃত্যশিল্পীরাও সম্ভাবনাময় সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুনছেন।

উৎসবে অংশ নেওয়া শিল্পীরা বলছেন, অন্যবারের সাংস্কৃতিক উৎসবের থেকে এবারের উৎসবটি অনেকটা ভিন্নতর ছিল। এতে যেসব শিল্পী অংশ নিয়েছেন, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। দর্শক গ্যালারিতে উপস্থিতি আগের উৎসবগুলোর চেয়ে বেশি থাকায় শিল্পীরাও ভালোটা উপহার দিতে পেরেছেন।

নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক সালমা মুন্নী বাংলা ট্রিবিউনকে বলছেন, এই অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ২০ জন শিল্পীর একসঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। ছোট থেকে শুরু করে গুরুজনরাও প্রতিদিন এখানে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। এ যেন এক আনন্দমুখর পরিবেশ ধরা দিল কংক্রিটের এই নগরে। আমার কাছে অনুষ্ঠানের সব শিল্পীর ছবি দিয়ে সংগীত ও নৃত্যকলা ভবনের আঙিনা সাজানোর বিষয়টি সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এটি দেখে শিল্পীরা ভালো নাচতে আরও বেশি উৎসাহিত হয়েছেন। এত সুন্দর আয়োজনের জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই।

আরেক নৃত্যশিল্পী জান্নাতুল সুরা টিয়া বলেন, সবাই অনেক বেশি পরিশ্রম করে এতগুলো শিল্পীকে সময়মতো একসঙ্গে করেছেন। এত সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য এবং আমাকে এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করছি।

গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলেছে সাংস্কৃতিক উৎসব। নানা দিক বিবেচনা করে উৎসবটির সময় ১০ দিনের সঙ্গে আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। সে হিসাবে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ‘বাংলার গৌড়ী নৃত্য’র মধ্য দিয়ে এই উৎসবমুখর পরিবেশ শেষ হবে।

S Accademy 2

এবারের উৎসবে বিভিন্ন ধারার নৃত্য পরিবেশন করে আসছেন নবীন-প্রবীণ শিল্পীরা। মনোমুগ্ধকর সেই দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সংস্কৃতিপ্রেমীদের মেলা বসছে শিল্পকলা একাডেমিতে। আজ দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠৗর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশিত হয়। ফলে অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন দর্শক গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।

১২ দিনব্যাপী এই সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের তত্ত্বাবধান করেন একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক সোহাইলা আফসানা ইকো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

উদ্বোধনী দিনে দেশবরেণ্য, প্রতিশ্রুতিশীল ও শিশু শিল্পীরা তাদের সেরা নৃত্য পরিবেশন করে। তাদের মধ্যে ছিল অনন্যা প্রজ্ঞা, অপূর্বা ইসলাম, হিয়া মেহজাবীন প্রজাপতি, টাপুর সাহা, ওয়ার্দা রিহাব, অমিত চৌধুরী, অনিক বোস প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দিলরুবা সাথী।

এদিকে, রবিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে ‘নননপুরের মেলায় একজন কমলা সুন্দরী ও ...’। এটি প্রযোজনা করেছে থিয়েটার ৫২। জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন করা হয় ‘নিখাই’ নাটক। থিয়েটার (আরামবাগ)-এর প্রযোজনা করেছে এটি।

নাটক দুটি দেখতে দর্শকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব দৃশ্য দেখে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন আয়োজকরা।