অভিনয়ের অসামান্য দ্যুতি ছড়িয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বিদগ্ধ নাট্যজন ড. ইনামুল হক। গেলো বছরের ১১ অক্টোবর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। দেখতে দেখতে তার প্রয়াণের এক বছর পার হয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) নন্দিত এই অভিনয়শিল্পীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
তবে তাকে স্মরণের জন্য বিশেষ আয়োজন রাখা হয়েছে আগামীকাল। বুধবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে সেই স্মরণসভা। খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতার কন্যা, নির্মাতা হৃদি হক।
তিনি জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় শুরু হবে এ আয়োজন। এতে অংশ নেবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়াও ড. ইনামুল হকের স্মরণে উপস্থিত থাকবেন মঞ্চ সারথি আতাউর রহমান, বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, নাট্যজন সারা যাকের, গোলাম রাব্বানী ও ড. রতন সিদ্দিকী।
‘মহাকালের ঘোড় সওয়ার’ শীর্ষক এই স্মরণসভার সঞ্চালনায় থাকবেন আজাদ আবুল কালাম। অনুষ্ঠানে অভিনেতার ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। সেই সঙ্গে তার তিনটি নাটকের মূল ভাবনায় কোলাজ নাটক ‘একাত্তর ও একজন নাট্যকার’-এর প্রদর্শনী হবে।
নাটকের একটি অংশে অভিনয় করবেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। ড. ইনামুল হকের স্মরণে এ অভিনেতা বলেছেন, ‘তিনি তার জীবন অতিক্রম করেছেন খুব সাধারণভাবে। যে কারণে অনেক প্রৌড়, যুবক, অনুজ সবাই তার বন্ধু হতে পেরেছে। জীবনের কাছাকাছি যেতে পেরেছে। এমন একজন মানুষ, যিনি মিশে থাকতেন সকলের মাঝে। ১২ অক্টোবরের আয়োজনে একটি নাট্যাংশে আমিও অভিনয় করছি, যে কারণে আমি খুবই আনন্দিত। এবং যারা এই সুযোগটি করে দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।’
তবে ছাত্রজীবনেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন ড. ইনামুল হক। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়েই প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। নাটকটি ছিল আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। এরপর দলটির হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন।
১৯৯৫ সালে ড. ইনামুল হক নিজেই একটি নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন, সেটির নাম ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। এখানে তার লেখা প্রথম নাটক ‘গৃহবাসী’ মঞ্চস্থ হওয়ার পর দারুণ সাড়া ফেলে।
শুধু অভিনয় নয়, লেখালেখিতেও সমান উজ্জ্বল ছিলেন ড. ইনামুল হক। টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক রচনা করেছিলেন তিনি। তার আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’।
বরেণ্য এই অভিনেতা ২০১২ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেছিলেন।