হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে পেয়ে ঢাকার মঞ্চে অশ্রুসিক্ত সুমন

‘হঠাৎ রাস্তায়/ অফিস অঞ্চলে/ হারিয়ে যাওয়া মুখ/ চমকে দিয়ে বলে/ বন্ধু কী খবর বলো/ কতোদিন দেখা হয়নি…।’ বন্ধুকে নিয়ে বহু বছর আগে কলকাতায় বসে এমন দরদী কথায় গান বেঁধেছিলেন দুই বাংলার কিংবদন্তি গানওয়ালা কবীর সুমন। 

শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায়, ঢাকায় সেই গানটি যেন নতুন প্রাণ পেলো। শিল্পী খুঁজে পেলেন গানটি বাঁধার সার্থকতা। কারণ, গানের কথার মতোই অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটলো রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।
 
এদিন সন্ধ্যায় দীর্ঘ ১৩ বছর পর ঢাকার মঞ্চে গাইছিলেন কবীর সুমন। ৭৪ বছর বয়সে এসে শরীর যার অনেকটাই নড়বড়ে। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না, বাজাতে পারেন না গিটার। শুধু কণ্ঠটাই রয়ে গেছে অমলিন। তাই গলা ছেড়ে গাইতে থাকলেন একের পর এক মুগ্ধতার গান।
 
গানের ফাঁকে ফাঁকে দু-চারটে কথাও বলেছিলেন গানওয়ালা। একপর্যায়ে তার মনে উঁকি দিলো ফেলে আসা দিনের একটি অধ্যায়। তখন তিনি জার্মানিতে। পশ্চিমবঙ্গে জরুরি অবস্থা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এমন বিপদে পথ না পেয়ে জার্মানিতে চলে যান সুমন! সেখানে গিয়ে চাকরি নেন জার্মান বেতারের বাংলা বিভাগে। কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয় বাংলাদেশি কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে। সেই সাংবাদিকদের নাম-স্মৃতি এখনও কবীর সুমনের মনে জ্বলজ্বল করছে। তাদের নাম বলে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন, জানালেন কেউ চলে গেছেন না ফেরার দেশে, কেউ অন্য দেশে। আর একজন এখনও ঢাকাতেই আছেন, তার নাম শাহজাহান ফারুক। 

সুমন যখন বললেন, ‘আমি জানি না শাহজাহান ফারুক এখানে আছেন কিনা’। কথা শেষ না হতেই দর্শক সারি থেকে একটি হাত উঁচুতে উঠলো, আশপাশ থেকে সজোরে বলা হলো, ‘আছে...’।
 
চমকিত, বিস্মিত হলেন কবীর সুমন। বসা থেকে নিজে নিজে উঠতে পারেন না। স্টেজের কিনারে থাকা লোকজনকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘আমাকে ধরো, দাঁড়াতে হবে।’ সেই সঙ্গে সাংবাদিক শাহজাহান ফারুককেও মঞ্চে উঠে আসতে বলেন। হারিয়ে ফেলা সেই বন্ধুকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন সুমন। আবেগে ভাসেন, তার চোখ ছলছল করে। অকপটে জানালেন, খুব কষ্টে কান্না চেপে রাখছেন। কিন্তু না, পুরোটা পারলেন না; অগত্যা রুমাল দিয়ে চোখজোড়া মুছতেই হলো সুমনকে। 

মোছা শেষে মৃদু হেসে বললেন, ‘জীবনটা কি সুন্দর না!’

কবীর সুমন ও শাহজাহান ফারুকের এই চমকপ্রদ সাক্ষাতের মুহূর্তটি সবাইকে মুগ্ধ করে। করতালিতে মুখরিত হয় পুরো অডিটোরিয়াম। পাছে কেউ ভাবে, এটা পরিকল্পিত। সুমন মা কালীর দিব্যি খেয়ে বললেন, ‘আমি সত্যিই জানতাম না ফারুক এখানে আছে।’
 
মোট তিন দিন গান গাওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছেন কবীর সুমন। আগামী ১৮ অক্টোবর একই ভেন্যুতে তিনি শোনাবেন আধুনিক বাংলা খেয়াল এবং ২১ অক্টোবর ফের শোনাবেন আধুনিক বাংলা গান। এরপর উড়াল দেবেন নিজ শহর কলকাতায়।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন