‘দামাল’র কামালে মুগ্ধ ফারুকী

‘ছেলেটা মাদ্রাসায় পড়েছে, তাই ওকে নিয়ে সুশীলরা টগবগায় না’

সদ্য মুক্তি পেয়েছে বহুল আলোচিত সিনেমা ‘দামাল’। বড় পর্দায় হালের সফল নির্মাতা রায়হান রাফীর চতুর্থ সিনেমা এটি। প্রেক্ষাপট, কাস্টিং, ট্রেলার, প্রচারণা নানান ইস্যুতে সিনেমাটি দর্শকের আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সেই আগ্রহের কতটা পূর্ণতা পায়, তার সমীকরণ মেলাতে অবশ্য আরও কিছু দিন সময় লাগবে।
 
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মুক্তির পর অনেকেই ‘দামাল’-এ চোখ বুলিয়েছেন। কেউ কেউ দামালের কামালে মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন। তেমনই একজন দেশের খ্যাতনামা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার মতে, এটি ঢালিউডের মূলধারার স্মার্ট সিনেমায় একটা বড় উদাহরণ।
 
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ফারুকী তার সোশ্যাল হ্যান্ডেলের মাধ্যমে জানালেন, তিনি যেদিন রাফীর নির্মিত প্রথম শর্ট ফিল্ম ‘আজব বাক্স’ দেখেছিলেন, সেদিনই এই তরুণের অপার সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরেছিলেন। ‘টেলিভিশন’-খ্যাত এই নির্মাতা বলেন, ‘ছেলেটা (রায়হান রাফী) মাদ্রাসায় পড়েছে, ভালো ইংরেজি বলে না, আমাদের হাই-সোসাইটির সদস্য না, বা ওর ছবিতে একটা ব্যাপার থাকে, সেই জন্যে ওকে নিয়ে সুশীল সমাজ খুব একটা টগবগায় না। কিন্তু ওর প্রথম শর্ট ফিল্ম দেখার পরেই আমার মনে হয়েছিলো ও অডিও-ভিজুয়াল ল্যাংগুয়েজটা বোঝে। এমন না যে, সে একটা ফিনিশড প্রোডাক্ট। বা আদৌ কেউ কি ফিনিশড প্রোডাক্ট হয়? আমরা প্রত্যেকেই তো দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিখতে শিখতে যাই।’

বেশিরভাগ হলে হাউসফুল চলছে ‘দামাল’অনেকের চোখে ফারুকী বিকল্প ধারার নির্মাতা। তবে তিনি নিজেকে মূলধারার মানুষও ভাবেন। সে কথা মনে করিয়ে এই নির্মাতা বললেন, ‘‘আমরা যখন ফিল্ম বানাতে শুরু করি, তখন আমাদের চাওয়া ছিলো, আমরা অঁতর ফিল্ম বানাবো; কিন্তু সেটা দর্শকের কাছেও পৌঁছবে। ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ আর ‘টেলিভিশন’ ছবি দুইটা নিয়ে বড় দর্শকের কাছে পৌঁছানো গিয়েছিলো। ‘শনিবার বিকেল’ সম্ভবত আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাবে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু আমরা এটাও জানতাম, অঁতর সিনেমার আগানোর সঙ্গে হাতে হাত ধরাধরি করে আছে ‘মূলধারা’র আগানোর ব্যাপারটা! মূলধারা লিখে কোটেশনের মধ্যে ফেললাম কেন, আমি নিজেকে মূলধারাও মনে করি!’’

রাফীকে মূলধারার স্মার্ট নির্মাতা হিসেবেই দেখেন ফারুকী। তার ভাষ্য, “মান্ধাতার ‘মেনস্ট্রিম’ স্মার্ট হওয়ার জন্য ছিলো আমাদের অপেক্ষা। ‘মনপুরা’ বা ‘আয়নাবাজি’ বা এরকম আরও কিছু ছবি স্মার্ট মূলধারার ভালো উদাহরণ। ‘দামাল’ স্মার্ট মূলধারার মধ্যে একটা বড় উদাহরণ হয়ে থাকলো।”

‘দামাল’ প্রসঙ্গে ফারুকীর বক্তব্য, “এই ছবির স্ট্রাকচার লিনিয়ার কোনও সহজ স্ট্রাকচার না। আবার একইসঙ্গে ‘দামাল’ অ্যাবসলিউটলি অরিজিনাল কিছু নিয়ে ডিল করে নাই। এই ধরনের ছবি যদি আপনাকে এনগেজ করতে হয়, তাহলে ছবিটার স্ক্রিপটিং, ফিল্মিং, এডিটিং, মিউজিক স্কিলফুলি করতে হয়। রায়হান রাফী ও তার টিম এই কাজটা সফলভাবে করতে পেরেছে। তার মানে কি ‘দামাল’-এ কোনও ডাউনসাইড নাই? নিশ্চয়ই আছে। কোথায় থাকে না? সেই ডাউনসাইড আমার বলারও প্রয়োজন নাই। সেটা রাফী নিজ দায়িত্বেই বুঝে পরের ছবিতে খেয়াল রাখবে। আমার শুধু বলা প্রয়োজন, গুড জব- রাফী। কিপ ইট আপ। সামনে আরও ভালো কাজ দেখার অপেক্ষায়।”‘দামাল’-এর তিন নায়কসবশেষে ‘দামাল’-এর ব্যবসায়িক সাফল্যও কামনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। 

উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রেক্ষাপটের ছায়ায় ‘দামাল’ নির্মাণ করেছেন রাফী। এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, বিদ্যা সিনহা মিম, শরিফুল রাজ, শাহনাজ সুমি, ইন্তেখাব দিনার, রাশেদ মামুন অপু, সুমিত সেনগুপ্ত, সমু চৌধুরী প্রমুখ। দেশের ২২টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে এটি।