প্রয়াণ দিনে স্মরণ

মিল-অমিলে ঋত্বিক ঘটক ও লতা মঙ্গেশকর

সাতচল্লিশ বছর আগেই ক্যালেন্ডারের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখটি বাঙালির মনে বিষাদময় হয়ে গিয়েছিলো। কারণ ওইদিন মারা গেছেন বাংলা তথা উপমহাদেশের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক। এরপর ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সেই পুরনো ক্ষতে বিষাদের চিরস্থায়ী সিলমহোর দেয় লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণ।

নিজ নিজ কাজে ঋত্বিক ও লতা দুজনেই খ্যাতি কুড়িয়েছেন। কালের দিগন্ত জয় করে হয়েছেন কিংবদন্তি, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। আজ সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাদের দুজনের মৃত্যুবার্ষিকী। চলুন নন্দিত এই তারকাদ্বয়ের মধ্যে কিছু মিল-অমিলের গল্পে নজর দেওয়া যাক।

স্বল্প তবু শূন্য নয় মিল

ঋত্বিক ঘটক ও লতা মঙ্গেশকরের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন বটে। তবে একেবারে যে নেই, তা নয়। হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে রোম্যান্টিক ছবির তালিকায় প্রথম দিকেই উল্লেখ করা হয় ‘মধুমতি’র নাম। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার ও বিজয়ন্তীমালা। এই ছবিতে কাজ করেছিলেন ঋত্বিক-লতা দুজনেই। এর মধ্যে ঋত্বিক লিখেছেন ছবিটির গল্প-চিত্রনাট্য, আর লতা মঙ্গেশকর গেয়েছেন পাঁচটি গান। মজার ব্যাপার হলো, এই ছবিতে গান গেয়েই প্রথম ফিল্মফেয়ার জিতেছিলেন লতা।

গানের সরস্বতী খ্যাত লতা মঙ্গেশকরমৃত্যুতে তারা এক হয়েছেন ক্যালেন্ডারের পাতায়। ৬ ফেব্রুয়ারি দুজনের মৃত্যুবার্ষিকী। তাই বিষাদের আঙুলে দুজনের অবস্থান একই বিন্দুতে। বাংলা এবং হিন্দি দুই ভাষাতেই তারা কাজ করেছেন। ফলে বলিউড আর টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসেও তারা চিরস্মরণীয়।

অমিলের যত গাঁথা

প্রথমেই আসা যাক বয়সে। ঋত্বিক ঘটক বেঁচে ছিলেন মোটে ৫১ বছর। অন্যদিকে লতা মঙ্গেশকর জীবনের পথ দীর্ঘ করেছেন ৯২ বছর অব্দি। ফলে কাজের সংখ্যার দিক দিয়েও তাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ।

লতা মঙ্গেশকর তার বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে প্রায় ৩৬টি ভাষায় গেয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি গান। সর্বোচ্চ গান গাওয়ার জন্য গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও দুইবার উঠেছে তার নাম।

ঋত্বিক ঘটকঅন্যদিকে ঋত্বিক ঘটকের কাজের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা। জীবদ্দশায় মাত্র আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এর বাইরে স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রের সংখ্যা ১০। যদিও কাজের সংখ্যার বিচারে কখনোই তাকে সীমাবদ্ধ করা যায় না। কেননা আটটি সিনেমা দিয়েই তিনি উপমহাদেশের সেরাদের সেরা হয়ে আছেন।

লতা ও ঋত্বিকের মৃত্যু একই দেশে (ভারত) হলেও জন্ম দুই দেশে। ভারতের মধ্যপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। অন্যদিকে ঋত্বিক ঘটকের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায়। ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি। সেই সুবাদে কলকাতাতেই শিল্পচর্চার জগত বিস্তার করেন এই নন্দিত ব্যক্তি।