স্বাধীনতা যুদ্ধের যেসব গল্প থেকে গেছে আড়ালে, সেরকম একটি ঘটনাই উঠে এসেছে গত ৩ মার্চ মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘জেকে ১৯৭১’-এ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ফ্রান্সের অর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) একটি বিমান ছিনতাই করেছিলেন ফরাসি যুবক জ্যঁ কুয়ে। তার সেই বীরত্বগাঁথাকে ঘিরেই সাজানো হয় ছবিটি।
কিন্তু মুক্তির ৮ দিন পর ফাখরুল আরেফিন খান নির্মিত এই ছবির বিরুদ্ধে উঠলো গল্প ‘চুরি’র অভিযোগ! অমিত মল্লিক নামের এক নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী দাবি করলেন, এই ঘটনা নিয়ে তিনিই প্রথম সিনেমার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যেটার নাম ‘পশ্চিম থেকে পূর্ব’।
শনিবার (১১ মার্চ) রাতে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে অমিত মল্লিক তার চিত্রনাট্য, কপিরাইটের সনদ, ফাখরুল আরেফিন খানকে পাঠানো ইমেইলের ছবি শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক অভিযোগ, “২০১৫ থেকে ২০১৭, দুই বছরের পরিশ্রম আমাদের টিমের। কিচ্ছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কাউকে ছোট করতেও ইচ্ছে করছে না। সবাই তো চেনা মানুষ। আমরা গিয়েছিলাম অগ্রজ হিসাবে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর বিষয়ে পরামর্শ নিতে। ফলাফল, সিনেমা বানিয়ে রিলিজ অব্দি হয়ে গেলো! ওহ, যারা বোঝেননি, আমি গত ৩ মার্চ রিলিজ হওয়া ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমার কথা বলছি। তবে আমার বানানো নয়। আমার কষ্ট, আমার ভাবনা, আমার ব্রেইন চাইল্ড কেন এভাবে হারাতে হবে?’
অমিত মল্লিকের ছবিগুলো ঘেঁটে দেখা গেলো, তিনি ২০১৮ সালেই এই গল্পের চিত্রনাট্যে কপিরাইট করিয়েছিলেন। সেই চিত্রনাট্য ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফাখরুল আরেফিন খানকে ইমেইলে পাঠিয়েছিলেন।
অমিত বললেন, “আমি তখন একটা টিভি চ্যানেলে চাকরি করি। ওই সময়ে শহীদুল ইসলাম ছুট্টু ভাই আমার কাছে গল্পটা নিয়ে আসেন। এই ঘটনাটি আমারও জানা ছিলো না। জানার পর মনে হয়, এটা অসাধারণ একটা গল্প এবং এটা নিয়ে সিনেমা করা যেতে পারে। একটা ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে মুক্তিযুদ্ধকে দেখা। এরপর আমরা দুই বছর গবেষণা করেছি, ফরাসি দূতাবাসের সঙ্গে আলাপ করেছি। তো একদিন ছুট্টূ ভাই-ই বললেন, ‘চলো আমরা একটু ফাখরুলের সঙ্গে কথা বলি। ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ভালো জানে।’ এরপর আমরা ওনার (ফাখরুল আরেফিন খান) অফিসে যাই এবং তিনিও কিছু পরামর্শ দেন। এরপর তিনি বলেন, আরও বিস্তারিত কাজ করা যেতে পারে, আপনি আমাকে চিত্রনাট্যটা ইমেইলে দিয়েন। কথামতো সেটাও করলাম।”
অমিত জানান, এরপর চাকরির সূত্রে টেকনাফে চলে যান তিনি। মাঝে মহামারি করোনা হানা দেয়। বাজেট সংক্রান্ত সংকটেও ছিলেন। সবমিলিয়ে তিনি কাজটি শুরু করতে পারেননি। কিন্তু এর মধ্যেই দেখলেন, ফাখরুল আরেফিন খান এই ঘটনা নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন।
তার ভাষ্য, ‘তিনি ঘোষণা দেওয়ার পর ছুট্টু ভাই তার কাছে গিয়েছিলেন। জানতে চান, বিষয়টি কেমন হলো! কিন্তু তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করলেন। আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা কিছু মনেই করতে পারছিলেন না!’
এই নির্মাতা-শিল্পীর আক্ষেপ, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমনিতেই মানুষ মরমর দশার মধ্যে মানুষ কাজ করছে। এখন আমরা একে-অপরকে সাহায্য না করি, কেউ একটা আইডিয়া চিন্তা করলো, আমি শুনেই ছবি বানিয়ে ফেললাম! এটা আসলে ঠিক না।’
এ বিষয়ে সামনে কোনও পদক্ষেপ নেবেন না বলেও জানালেন অমিত। তার মতে, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় আমি যেতে চাই না। অযথা এই জটিলতায় যাওয়া আমার পছন্দ না। এতে কোনও লাভ নেই।’
সবশেষে অমিত মল্লিক বলেছেন, যদি বাজেটের সংকুলান করতে পারেন, তাহলে আগামীতে নিজের চিত্রনাট্যের ছবিটি তিনি নির্মাণ করবেন।