বরাবরই শোনা যায় বাংলাদেশে নৃত্যশিল্পীরা কিংবা নাচের দল সবচেয়ে অবহেলিত। কারণ, নাচ নিয়ে ঈদ-উৎসবে দু’একটি টিভি আয়োজন থাকে বটে; কিন্তু বছরজুড়ে শিল্পের এই দিকটি নিয়ে চর্চা হয় না বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতেও যে ক’জন মানুষ নিরলস নেচে যাচ্ছেন পর্দায় ও মঞ্চে, পরিচালনা করছেন বড় একটি দল- তার মধ্যে নৃত্যজন আনিসুল ইসলাম হিরু অন্যতম।
চার দশকের অতীত ইতিহাস বাদ দিন। চলতি মার্চেই হিরু ও তার দল মাতিয়ে এলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান। দেশটিতে ৭দিনে তারা পাঁচটি বড় আয়োজন মাতিয়ে এলেন। দেশে নেমেই উড়তে হলো ভারতের আগরতলায়। সেখান থেকেই শোনা হলো হিরু ও তার দলের জর্ডান জয়ের গল্প।
রবিবার (২৬ মার্চ) হিরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন আমরা আছি আগরতলায়। ২৩ মার্চ জর্ডান থেকে ঢাকায় নেমে বিশ্রামের পরিকল্পনা থাকলেও সেটি আর হলো না। পরদিনই আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার আরিফ মুহাম্মদ ভাইয়ের আমন্ত্রণে আসতে হলো। এসেই অংশ নিলাম বইমেলা উদ্বোধনে। আর মূল অনুষ্ঠানটি হবে আজ সন্ধ্যায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে। সেখানে চাঁদনীসহ আমরা ১০ জনের দল পারফর্ম করবো। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের।’
২০ মার্চ জর্ডানের আম্মান শহরের গ্র্যান্ড হায়াত পাঁচ তারকা হোটেলের বল রুমে সাজানো হয় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের লাল-সবুজের আয়োজন। যে আসরের প্রধান চমক ছিলো হিরু-চাঁদনীর নৃত্যায়োজন।
এই আয়োজনটি সফলভাবে শেষ করে দারুণ উচ্ছ্বসিত হিরু। আগরতলা থেকে শোনালেন জর্ডানের গল্প, ‘সেই আয়োজনটিতে আড়াইশ ডিপ্লোম্যাট উপস্থিত ছিলেন। এটি বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেছে জর্ডানের মিনস্ট্রি অব কালচার। ফলে জর্ডান-বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটরা ছাড়াও বিশ্বের নানা দেশের এলিটরা ছিলেন। আমাদের শো শেষে যে করতালি আর প্রশংসা এলো, সেটি আমার পারফর্মিং জীবনে খুব কমই পেয়েছি। আমাকে ঐ আয়োজনে মঞ্চে ডেকে সম্মাননা ক্রেস্টও দিয়েছেন আয়োজকরা। স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে ভিনদেশ থেকে এমন সম্মাননা সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি অ্যাম্বাসেডর নাহিদা সোবহানের।’
ঠিকই শুনেছেন। বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মী। হিরু বলেন, ‘আমি এবার জর্ডান না গেলে এই বিস্ময়কর তথ্য জানতেই পারতাম না। জর্ডানের সিংহভাগ গার্মেন্টস কর্মী বাংলাদেশের। শুধু কর্মীই নয়, এরমধ্যে বাংলাদেশের মালিকও রয়েছেন। পাশাপাশি ভারত-শ্রীলংকা-নেপালের কর্মী-মালিকও আছে। যাইহোক, জর্ডানে এই গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য আরও চারটি শো করলাম আমরা। যে অভিজ্ঞতা এর আগে আমাদের খুব একটা ছিলো না। এটা অন্যরকম ভালোলাগার একটা অভিজ্ঞতা। আমাদের নাচের তালে গার্মেন্টস কর্মীরা নাচছেন, গাইছেন। এসব দেখে বুকটা আমাদের ভরে গেলো।’
বিশ্বের নানা প্রান্তে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনের মঞ্চে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াতে চান হিরু-চাঁদনী জুটি।