বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার বয়স ৩৫ বছর। ১৯৮৮ সালের ২৭ মে কিংবদন্তি শিল্পী কলিম শরাফীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠা হয় এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের। টানা চার দশক ধরে সংগঠনটি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে দেশ ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে চলেছে নিয়মিত। তারই ধারাবাহিকতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মদিন (২৫ বৈশাখ) উপলক্ষে ৩৪তম ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব’ আয়োজন করেছে সংস্থাটি। যা অনুষ্ঠিত হবে ১২ ও ১৩ মে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে।
মূলত এই বিষয়ে জানাতে শুক্রবার (৫ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এতে কথা প্রসঙ্গে সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ, নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পীযূষ বড়ুয়ার কণ্ঠে উঠে আসে ক্ষোভ ও অভিমানের সুর। কারণ, ঠিক একই নামে আরও একটি সংগঠন নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যার ফলে দুটো সংগঠনকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নানা বিভ্রান্তি, সন্দেহ আর সমালোচনা। যা এই শিল্পীদের জন্য যথেষ্ট মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, সভাপতি তপন মাহমুদ ও সম্পাদক পীযূষ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আড়াই শতাধিক সদস্যের সমৃদ্ধ সংগঠন ‘বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা’ থেকে কিছু সংখ্যক সদস্য বেরিয়ে একই নামে আরেকটি সংগঠন দাঁড় করান। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই সংগঠনটির কোনও দাফতরিক অনুমোদন নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ফাউন্ডেশন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ‘বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা’র ব্যানারে রাজধানী ঢাকায় (মূল সংগঠন/শাখা) এবং বাংলাদেশের প্রতি বিভাগ ও জেলায় একটি করে বিভাগীয়/ জেলা শাখা গঠন, ঢাকা মহানগরের জন্য একটি আলাদা মহানগর শাখা গঠন এবং দেশের বাইরে কোনও দেশ বা সে দেশের রাজধানী বা যে কোনও শহর ভিত্তিক শাখা গঠন করতে পারবে, যা ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে। এর বাইরে কোনও ব্যক্তি বা তথাকথিত সংগঠন এই সংস্থার সুনাম ব্যবহার করে অনুমতি ব্যতিরেকে একই নামে কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। যদি করে সেটি হবে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই বলে রাখছি, যারা অনুমতি ছাড়া এই সংস্থার নাম ব্যবহার করবেন তারা নিশ্চিতভাবে আইনি জটিলতায় পড়বেন।’’
এদিকে সভাপতি তপন মাহমুদ অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়াল বক্তৃতাতে বলেন, ‘সূচনা লগ্ন থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত সংস্থা যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। যতই বাধা বিপত্তি আসুক না কেন, এই সংস্থা তার মহৎ উদ্দেশ্য থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসবে না।’
সংস্থার আজীবন সদস্য রফিকুল আলম বলেন, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক সেই সূচনা লগ্ন থেকেই। এই সংগঠন যে উদ্দেশে গঠিত হয়েছে তার সাথে আমার আদর্শের মিল রয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত আমাদের সদা জাগ্রত রাখে ও প্রেরণা দায়ী। বছর বছর সঙ্গীত উৎসবের মাধ্যমে এই সংস্থা যেভাবে সংস্কৃতিমনা মানুষকে জাগিয়ে রেখেছে, আশা করি তা অব্যাহত থাকবে। মনে রাখতে হবে, যে গোষ্ঠী বা গোষ্ঠীসমূহ দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে ওই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।’
এবারকার জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়/ আপনাকে তুই করে নে জয়...’। এবারের উৎসবে দুই গুণীজনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হবে। তারা হলেন কিংবদন্তি গিটার শিল্পী এনামুল কবীর ও প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী লিলি ইসলাম। উদ্বোধনী দিনে এই দুই গুণীর হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন উৎসবের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি। সভাপতিত্ব করবেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনের ছবি: সাজ্জাদ হোসেন