জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব: সম্মাননা ও গান-আবৃত্তিতে মুগ্ধকর সন্ধ্যা

রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব’র এবারের আসর শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১২ মে) সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শুরু হয় উৎসবটির ৩৪তম আয়োজন। বরাবরের মতো এর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য- ‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়/ আপনাকে তুই করে নে জয়।’

উৎসবের প্রথম দিনের কার্যক্রম দুটি অধিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। সকালের অধিবেশনে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উদ্বোধন, দলীয় নৃত্য এবং দলীয় ও একক সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। এরপর বিকালে অনুষ্ঠিত হয় দিনের মূল পর্ব তথা গুণীজন সম্মাননা ও সংগীতানুষ্ঠান।

বাঁ থেকে- আমিনা আহমেদ, এনামুল কবির, লিলি ইসলাম ও পীযূষ বড়ুয়া

বিকাল পাঁচটায় এই অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পীযূষ বড়ুয়া। এবার সম্মাননা দেওয়া হয়েছে কিংবদন্তি গিটারশিল্পী এনামুল কবির ও বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিলি ইসলামকে। তারাও মঞ্চের আসন অলংকৃত করেছেন। সম্মাননাস্বরূপ শিল্পীদ্বয়ের হাতে ক্রেস্ট, মানপত্র ও ফুল তুলে দেওয়া হয়।

বক্তব্য রাখছিলেন আমিনা আহমেদ

উৎসবে আসা দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ বলেন, ‘আপনাদের এই উপস্থিতি আমাদের অনেক উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করলো। আশা করি আগামীতেও থাকবেন। এই দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমাদের সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কলিম শরাফীকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির কাছে বিশেষ একটি নাম। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রধান স্তম্ভ। বিশাল সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি বাঙালির রক্তস্রোতে এখনও মিশে আছেন। রবীন্দ্রনাথ আছেন, থাকবেন এ দেশের অগণিত মানুষের চিন্তা-চেতনায়। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আমাদের মুক্তি নাই। দেশের এই ক্রান্তিকালে আরও বেশি করে রবীন্দ্রচর্চা তথা শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা হওয়া প্রয়োজন। তাই এমন শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় আমরা সবসময় আপনাদের পাশে পেতে চাই।’

শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা

সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক পীযূষ বড়ুয়া তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘সকালের অধিবেশনে আমরা উৎসবের উদ্বোধন করেছি। এই পর্ব আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এখানে আমরা বাংলাদেশের দুজন স্বনামধন্য ও আমাদের প্রিয় শিল্পীকে ভালোবাসা জানাবো। সংবর্ধনা জানাবো। এটা অনেক বড় কথা। আমরা আসলে তাদের আমাদের ভালোবাসা জানাবো। আপনারা এসেছেন, আগামীকালও আসবেন আশা করি। নতুন, পুরাতন অনেক শিল্পী আপনাদের গান শোনাবে।’

সম্মাননাপ্রাপ্ত এনামুল কবিরও ছিলেন পরিবেশনায়

সম্মাননা প্রাপ্তির পর অনুভূতি প্রকাশে গিটারশিল্পী এনামুল কবির বললেন, ‘আজকে একটা বিশেষ দিন। যারা আমরা গিটার বাজাই, গিটারশিল্পীদের যে সম্মান দেখানো হলো, এই সম্মান আমি সমস্ত গিটারশিল্পীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এই সম্মান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এভাবে রবীন্দ্রনাথের গান চলবে, গিটার চলবে, এই আশা রাখি। সবাই সংগীতের সঙ্গে থাকুন।’

মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন গুণী শিল্পী রফিকুল আলম

রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিলি ইসলামের অনুভূতি ছিল এরকম, ‘বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা আমাকে এই সম্মাননার জন্য মনোনীত করায় আমি সত্যিই আপ্লুত। রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, তখন কলকাতা থেকে বহু মানুষ তাকে সংবর্ধনা জানাতে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তখন দেখলেন, সামনের সারিতে থাকা বেশিরভাগ মানুষই রবীন্দ্র সমালোচনায় মুখর ছিলেন এবং চিরকাল নিন্দাই করতেন। আমি সেদিক থেকে ভাগ্যবান যে আমার সামনে যারা বসে আছেন, তারা সবাই আমাকে ভালোবাসেন। সম্মাননা পাওয়া কিন্তু কঠিন একটি ব্যাপার। কারণ, এরপরে দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেলো। আরও অনেক কাজ করতে হবে।’

বাজনায় ছিলেন পীযূষ বড়ুয়াও

শিল্পীদের সম্মাননা ও বক্তব্যের পর শুরু হয় সংগীত-আবৃত্তি পর্ব। এই পর্বে সংস্থাটির শিল্পীরা তাদের বিভিন্ন পরিবেশনায় দর্শক-শ্রোতাদের মনে ছড়িয়ে দেন প্রশান্তি। দুদিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হবে শনিবার (১৩ মে) বিকেল ৫টায়। এদিনও শিল্পীরা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করবেন।