এমনটা সম্ভবত কান ইতিহাসে আর ঘটেনি, যেমনটি ঘটলো শুক্রবার (২৬ মে) পালে ভবনের দ্যুবুসি থিয়েটারে। এদিন সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা) বসেছে উৎসবের অন্যতম বিভাগ আঁ সাঁর্তা রিগা বিভাগের সেরা ছবির স্বীকৃতি দেওয়ার আসর। যে আয়োজনে ঘটেছে নতুন ইতিহাস, সেটি প্রকাশের আগে জেনে নেওয়া যাক এই বিভাগে বিচারকদের দৃষ্টিতে বিভিন্ন শাখায় সেরা ছবিসহ বিজয়ীদের নাম।
আঁ সাঁর্তা রিগা প্রাইজ জিতলো যুক্তরাজ্যের নারী নির্মাতা মলি ম্যানিং ওয়াকারের (প্রথম ছবি, যুক্তরাজ্য) ৯৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘হাউ টু হ্যাভ সেক্স’। এর বাইরে নিউ ভয়েস প্রাইজ পেয়েছে বালোজি (প্রথম সিনেমা, বেলজিয়াম) নির্মিত ‘অমেন’, অনসাম্বল প্রাইজ পেয়েছে জোয়াও সালাভিৎসা (পর্তুগাল) ও রেনে নাদের মেসোরা (ব্রাজিল) পরিচালিত ‘দ্য বুরিটি ফ্লাওয়ার’, ফ্রিডম প্রাইজ পেয়েছে মোহাম্মদ কোর্দোফানির (সুদান) ‘গুডবাই জুলিয়া’, সেরা নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন ‘দ্য মাদার অব অল লাইস’ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য আসমা এল মুদির (মরক্কো) এবং জুরি পুরস্কার পেয়েছে কামাল লাজরাক পরিচালিত ‘হাউন্ডস’ (প্রথম সিনেমা, মরক্কো)।
এবারের আঁ সাঁর্তা রিগা’র গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো, বড়জোর দু’একটি প্রতিক্রিয়ায়। কিন্তু তার আগেই এই মঞ্চে গান গাইতে হলো বিভাগের প্রধান বিচারক জন সি. রাইলিকে! তাও আবার পরপর দুটি। দুটো গানই তাকে গাইতে হলো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই, বাধ্য হয়ে। কারণ, এবারের আয়োজনে যে ছবিটি (হাউ টু হ্যাভ সেক্স) সেরার পুরস্কার পেলো, সেটির পরিচালক (মলি ম্যানিং ওয়াকার) তখনও দ্যুবুসি থিয়েটারে পৌঁছাননি। তাও আবার তিনি আসছেন সরাসরি ফ্লাইট থেকে নেমে বিমানবন্দর হয়ে!
এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রধান বিচারক তথা অভিনেতা জন সি. রাইলি গান ধরেন খালি গলায়। তাতে উপস্থিত সবাই দারুণ আনন্দ পান। সেটি শেষ হওয়ার পরেও যখন মলির দেখা নেই, তখন বাধ্য হয়ে আরও একটি গান ধরেন বিচারক। অবশেষে ৭ মিনিটের মাথায় দৌড়ে দ্যুবুসি থিয়েটারে ঢুকে সোজা মঞ্চে ওঠেন নির্মাতা মলি ম্যানিং ওয়াকার। তার পরনে ছিল কালো শর্টস, হলুদ টি-শার্ট আর পায়ে কেডস। মঞ্চে উঠেই জড়িয়ে ধরেন জন সি. রাইলিকে। এরপর পুরস্কারটি হাতে নেন।
কিছু বলতে বলা হয় মলিকে। কিন্তু কথা তো বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। কারণ, পালে ভবনের ফটক থেকে দ্যুবুসি অডিটোরিয়ামের মঞ্চ পর্যন্ত তিনি এক দৌড়ে এসেছেন। এরপর হাঁপাতে হাঁপাতেই বলেন, ‘এই ছবিটি আমার জীবনে ম্যাজিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স এনে দিয়েছে। যার ধারাবাহিকতা আজও হলো। সবাইকে ধন্যবাদ, আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য।’
এবারের আঁ সাঁর্তা রিগা’র অন্যতম দিক হলো ছয়টি পুরস্কারের তিনটিই নির্মাতাদের প্রথম ছবি।
এবারের আঁ সেঁর্তা রিগা আসরে প্রতিযোগিতায় ছিল ২০টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে নবাগত পরিচালকদের কাজ ছিলো ৮টি। এবার এই বিভাগের জন্য নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছে মোহাম্মদ কোর্দোফানি পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘গুডবাই জুলিয়া’। কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে এবারই প্রথম উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের কোনও ছবি জায়গা পেলো। ২০১১ সালে সুদান দুটি দেশে বিভক্ত হওয়ার আগে রাজধানী খার্তুমে এর শুটিং হয়েছে। ছবিটি ফ্রিডম প্রাইজ জিতে নেওয়ায় আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করলো সুদান।