প্রয়াণ দিনে স্মরণ

ঋতুপর্ণ ঘোষ: বিতর্ক আর সম্মান যার জীবনে সমান্তরাল

বাংলা সিনেমার সেরা নির্মাতাদের তালিকা করলে তার নামটি থাকবে প্রথম সারিতে। সিনেমার ক্যানভাসে তিনি এমন সব উপাখ্যান এঁকে গেছেন, যেগুলো তাকে দিয়েছে সাহসী খেতাব, অমরত্বের স্বাদ। আবার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হয়েছেন সমালোচনায় জর্জরিত। বিতর্কের জোয়ারে প্লাবিত হয়েছেন বারংবার।

নিন্দা-বিতর্কের রাজপথে হেঁটে সাফল্য-সম্মানের গন্তব্য ছুঁতে পারা সেই নির্মাতার নাম ঋতুপর্ণ ঘোষ। আজ মঙ্গলবার (৩০ মে) সাহসী এই নির্মাতার দশম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে মারা গেছেন তিনি।

ঋতুপর্ণ ঘোষ সমকামী ছিলেন এবং এই বিষয়টি নিয়ে তিনি লুকোছাপা করেননি। প্রকাশ্যেই নিজের সত্তাকে উপস্থাপন করেছেন। লিঙ্গ বৈষম্যের নানা প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন নিজের নির্মাণে। এসব কারণে অন্তহীন নিন্দা সহ্য করতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু নিজের চিন্তা-আদর্শ কখনও বিসর্জন দেননি।

১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাবা-মা দুজনেই সিনে জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে ছোটবেলাতেই রূপালি ভুবন তাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।

ঋতুপর্ণ ঘোষ ও তার কয়েকটি ছবির পোস্টারসিনেমায় আসার আগে কপিরাইটার হিসেবে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেছিলেন ঋতু। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে সিনেমায় নামেন তিনি। প্রথম ছবির জন্য বেছে নেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস। নির্মাণ করেন ‘হীরের আংটি’। ১৯৯২ সালে ছবিটি মুক্তি পায়।

১৯৯৪ সালেই নিজের প্রতিভার স্বীকৃতি পান ঋতুপর্ণ। ‘উনিশে এপ্রিল’ নির্মাণ করে দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি জিতে নেন পুরস্কারও। ছবিটি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। এরপর একে একে নির্মাণ করেছেন ‘দহন’, ‘তিতলি’, ‘রেইনকোট’, ‘চোখের বালি’, ‘অন্তরমহল’, ‘দোসর’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘আবহমান’, ‘নৌকাডুবি’র মতো নন্দিত চলচ্চিত্র।

সম্মান তথা পুরস্কার যেন দুহাতে কুড়িয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। ১২বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎসবেও পেয়েছেন স্বীকৃতি, সম্মাননা।