অনবদ্য পরিবেশনায় রুঢ় বাস্তবতার গল্প

বৃষ্টিতে কাকভেজা শহরে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। সদ্য জ্বলে ওঠা নিয়ন আলোর ফাঁকেও আকাশের নীলচে আভা উঁকি দিচ্ছে। এমন মুগ্ধকর সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) রিসার্চ ভবন অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় একটি নাটকের মঞ্চায়ন। ‘প্রায় তিন/চার জন’ শীর্ষক সেই নাটক মঞ্চস্থ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির নাট্যদল ‘থিয়েটার ইউল্যাব’।

বুধবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নাটকের মঞ্চ প্রস্তুত। দর্শক আসনও প্রায় পরিপূর্ণ। পরিকল্পনামাফিক শুরু হয় নাটক। গুঢ় আবহ সংগীতে প্রথমেই একটা গভীর আবহ তৈরি করা হয়। এরপর একে একে মঞ্চে আসেন অভিনয়শিল্পীরা। নানা সংলাপে, অঙ্গভঙ্গিতে মুগ্ধতা ছড়ান। কখনও ‘এই বিষয়ে আমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই’, কখনও ‘শুধু বাঁচার জন্য বেঁচে থাকো’র মতো সংলাপ ভাবিয়েছে উপস্থিত দর্শককে।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দীর্ঘ নাটকটি রচনা করেছেন জাহিদ সোহাগ। নির্দেশনা দিয়েছেন সারোয়ার জাহান উপল।

অভিনয়শিল্পীদের পরিবেশনানাটক পরিবেশনা শেষে মঞ্চে ওঠেন রচয়িতা। গল্প নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন। বলেছেন, ‘৩০টা দিনও অনুশীলন করার সময় পায়নি শিক্ষার্থীরা। এরপরও আমরা এমন একটি পরিবেশনা দেখলাম, এটা সত্যিই বিস্ময়কর। ঘরে-বাইরে নানা জায়গায় প্রশ্ন, এই নাটকে আসলে কী বলা হয়েছে? আমার মনে হয়, এই নাটকের মূল অর্থ- নীরবতা। সারা বিশ্বে যুদ্ধের নামে, রাজনীতির নামে, ধর্মের নামে শুধু মানুষই মরছে। পত্র-পত্রিকায় তো আমরা শুধু মৃতের একটা সংখ্যা দেখি। কিন্তু প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব একটা জীবন, পরিবার আছে, মা আছে। এসব নিয়ে বিশ্বমাতা আর্তনাদ করছে। আমাদের জীবন মৃত্যুরই পরিণতি।’

নাটকটির মঞ্চায়ন সামনে বসে উপভোগ করেছেন ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কাজী আনিস আহমেদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘এত সুন্দর একটি নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ। এটার পরে আমাদের কথা আসলে বাহুল্য হয়ে যায়। তবু আমি বলতে চাই, আজকের সন্ধ্যায় এই মঞ্চ অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা এবং লেখকের জন্য। খুব অল্প সময়ের অনুশীলনে তারা যে পরিবেশনা দিয়েছে, আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব ভালো লেগেছে। এই নাটকটি আমি আগে পড়েছিলাম। আমরা যখন কোনও কিছু পড়ি, তখন কিন্তু একটা কল্পচিত্র তৈরি হয় মনে। কিন্তু আজকের পরিবেশনা দেখে বুঝলাম, এটা সম্পূর্ণ আলাদা এবং আরও বেশি চমকপ্রদ। তাই নির্দেশক এবং অভিনয়শিল্পী সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’

মঞ্চে অতিথিদের সঙ্গে নাটকের লেখক, নির্দেশক ও শিল্পীরানাটকটি দেখতে হাজির হয়েছেন ইউল্যাবের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের অনেকে। পরিবেশনা শেষে তাদের উচ্ছ্বাস আর করতালিতে বোঝা যায়, নাটকটি তারা উপভোগ করেছেন।

ছবি: কামরুল ইসলাম