দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে দাপটের সঙ্গে চলছে বলিউড সিনেমা ‘জাওয়ান’। লাগাতার হাউজফুল শো। ফলে দুই-তিন দিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট কেটে ছবি দেখতে যাচ্ছে দর্শক। কেউ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে, কেউ স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে, আবার কেউ ব্যক্তিগত সময়টা বিসর্জন দিয়ে লাইন ধরছেন হলের সামনে। এমন অবস্থায় যদি প্রদর্শনীই বাতিল হয়ে যায়, তাহলে?
বলার জন্য বলা না, এমনটাই ঘটছে দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সের একাধিক শাখায়। এবং তা সাম্প্রতিক সময়ে যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ক্ষুব্ধ দর্শকের স্ট্যাটাস, পোস্ট, ভিডিওতে সয়লাব।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার শো দেখতে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে যান রাকিব হাসান (ছদ্মনাম)। ভেবেছিলেন, দুপুর নাগাদ শো শেষ করে পেশাদার কাজে ঢুকবেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক সময় নষ্ট করে ‘জাওয়ান’ না দেখেই ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। কারণ- কারিগরি ত্রুটি।
বাংলা ট্রিবিউনকে রাকিব বললেন, ‘আমাদের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে তারা জানালো, কারিগরি ত্রুটির কারণে সিনেমা চলবে না। এরপর দর্শকরা ক্ষেপে যায়। অনেকটা সময় সেখানকার সাধারণ কর্মীরা দর্শককে সামলানোর চেষ্টা করে। পরে এক সিনিয়র কর্মকর্তা এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। দর্শকদের কেউ পরবর্তী শো দেখার দাবি করে, আবার কেউ টিকিটের টাকা ফেরত চান। আমিও টিকিটের টাকা রিফান্ড নিয়ে ছবি না দেখেই চলে এসেছি। কারণ কাজ ফেলে সারা দিন তো বসে থাকা সম্ভব না।’
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার শাখায় ‘জাওয়ান’ দেখতে গিয়ে আরও বাজে পরিস্থিতির শিকার হন দর্শক। সে দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে শরীফ আহমেদ (ছদ্মনাম) নামের এক দর্শক জানান, শো শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মাথায় স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যায়। মিনিট দশেক পর পুনরায় চালু হয় বটে, কিন্তু ছবি আর আগের জায়গায় নেই, অনেকটা এগিয়ে গেছে! কর্তৃপক্ষ তখনও জাগিয়ে তোলে ‘কারিগরি ত্রুটি’ সাইনবোর্ড।
কারিগরি ত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে দেশের আধুনিকতম এবং বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্সের ক্ষেত্রে বিষয়টা যখন নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়, তখন সেখানে প্রশ্নের আঙুলও উঠবে স্বাভাবিক। তাই ইস্যুটি নিয়ে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা জানতে চায় বাংলা ট্রিবিউন।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বললেন, ‘মানুষের ক্ষেত্রেই বিশ্বাস নেই, এটা তো যন্ত্র। কারিগরি ত্রুটি হতেই পারে। বিমানের ফ্লাইট বাতিল হয়, ট্রেনের শিডিউল পেছানো হয়; যত কিছুতে টেকনিক্যাল বিষয় যুক্ত আছে, সবখানেই মাঝেমধ্যে এরকম সমস্যা হয়। আমরাও সেই সমস্যার উর্ধে নই। তবে হ্যাঁ, শো যখন বাতিল হয়, তখন আমরা দর্শকের ইচ্ছে অনুযায়ী টিকিটের টাকা রিফান্ড করি, অথবা কেউ চাইলে পরবর্তী শোতে দেখার ব্যবস্থা করে দেই।’
অতীতেও এরকম সমস্যা বহুবার হয়েছে। তবে সেটা স্থায়ী হয়নি বলে দাবি মেসবাহ উদ্দিন আহমেদের। তার ভাষ্য, ‘সমস্যা দেখা দেওয়া মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, সমাধান করেছি। এখনও আমাদের টেকনিক্যাল টিম সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।’
মেসবাহ জানালেন, এটি ‘জাওয়ান’র সার্ভারজনিত কোনও সমস্যা নয়, তাদেরই হলের নিজস্ব কারিগরি ত্রুটি। তবে একটি আশঙ্কাও উত্থাপন করলেন তিনি। সেটা এরকম, “এর আগে বহুবার এমন সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এবারের মতো এরকম মাতামাতি হয়নি। হিন্দি ছবি বলেই কি বেশি কথাবার্তা হচ্ছে? আমি বুঝতে পারছি না।’
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে দেশের প্রেক্ষাগৃহ বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে স্টার সিনেপ্লেক্স। আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত তাদের হলগুলোতে দর্শকের ভিড় বাড়তে থাকে ক্রমশ। সেই সুবাদে এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মিলিয়ে সিনেপ্লেক্সের শাখা হয়েছে সাতটি।