বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। তিনি বাংলা পপ গানের ‘সম্রাট’ নাকি ‘গুরু’- এ বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে তার কণ্ঠ ধরেই যে বাংলাদেশে পপ গানের যাত্রা এবং জনপ্রিয়তা আসে সে বিষয়ে কারও বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। শুরু থেকে বাংলাদেশের দ্বিধা-বিভক্ত সংগীতাঙ্গনের একটি বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের এক রেখায় টানা যায়নি কখনও। সেই সংগীতাঙ্গনে একমাত্র ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব আজম খান।
১৯৫০ সালের এই দিনে (২৮ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার আজিমপুরে আজম খানের জন্ম হয়। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবার নাম আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। তার শৈশবের পাঁচ বছর কাটে আজিমপুর কলোনিতে। তারা ৪ ভাই ও এক বোন ছিল। ১৯৫৫ সালে তিনি প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানালে সেখানে চলে যান পরিবারসহ।
ভিডিওতে দেখুন মুন্নী সাহার নেওয়া আজম খানের শেষ সাক্ষাৎকার:
কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে এসে ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচার করেন।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন তার বয়স ২১ বছর। যুদ্ধে যোগ দিতে তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। আগরতলার পথে সঙ্গী হন তার দুই বন্ধু। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। ঢাকায় তিনি সেকশান কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন।
এরপর ইন্দিরা রোডের ঢাকা রেকর্ড থেকে ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে তার প্রথম রেকর্ড বের করেন সালাউদ্দিন নামের জনৈক ব্যক্তি আলম খানের পরিচালনায়। ১৯৮২ সালে এক যুগ নামে তার প্রথম ক্যাসেট বের হয়। এরপর তার বেশ কিছু ক্যাসেট এবং সিডি বাজারজাত হয়। তার প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়।
এ পর্যন্ত তার ১৭টি গানের অ্যালবামসহ বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবাম প্রকাশ হয়। তার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মাঝে উল্লেখ যোগ্য কিছু গান হল- আমি যারে চাইরে, অভিমানি তুমি কোথায়, একদিনতো চলে যাবো, জীবনে কিছু পাবো নারে, আসি আসি বলে তুমি আর এলেনা, ও চাঁদ সুন্দর চাঁদ, চুপ চুপ অনামিকা চুপ, হারিয়ে গেছো খুজে পাবোনা, ঘুম আসেনা ইত্যাদি।
এছাড়া তার 'উচ্চারণ' ব্যান্ডদল বেশ জনপ্রিয় ছিলো।
২০১০ সালে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হন। ২০১১ সালের ৫ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই পপসম্রাট।
/এস/এমএম/