কেউ চায় না, তবু এরকম সন্ধ্যা আসে। যে সন্ধ্যায় প্রিয়তম শিল্পীকে নিয়ে বলতে হয় স্মৃতিকথা। যিনি পৃথিবীর অধ্যায় চুকে চলে গেছেন অনন্তলোকে, অমরত্বের পথে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এমনই সন্ধ্যা নেমেছিল। যেখানে রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী, অনুরাগীরা একত্র হয়েছেন তাদের অধিকাংশের গুরু সাদি মহম্মদ স্মরণে।
গত ১৩ মার্চ এরকমই সন্ধ্যায় হঠাৎ মৃত্যুর পথ বেছে নেন নন্দিত এই শিল্পী। যিনি তার জীবনের পুরোটা সময় বিলিয়ে দিয়েছেন সংগীতে। পথ দেখিয়েছেন পরবর্তী একাধিক প্রজন্মকে। নিজের দীপ্ত প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীর মাঝে। যারা পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন রবীন্দ্রসংগীতের সফল শিল্পী। সেই গুণী গুরুর স্মরণে গান-কথার বিশেষ আয়োজন সাজিয়েছে সাদি মহম্মদেরই গড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘রবিরাগ’।
সন্ধ্যা ৭টায় নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। যেখানে সাধারণ দর্শক ও রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পীরা ছাড়াও উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।
‘রবিরাগ’র সভাপতি হিসেবে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী আমিনা আহমেদ। সাদি মহম্মদের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তার সুর-সম্পর্ক ও পারিবারিক বন্ধন ছিল। সেসব স্মৃতির টুকরো কিছু অংশ তুলে ধরেন তিনি। আমিনা আহমেদ বলেন, ‘তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল গত ভালোবাসা দিবসে। দুজনে ফুল দেওয়া-নেওয়া করেছি, শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। আমি তাকে গুরু বলি। কিন্তু বয়সে তিনি আমার ছোট। অথচ আমাকেই কিনা বিদায় জানাতে হলো ছোট ভাইকে। সাদি মহম্মদ যেখানেই আছেন, ভালো থাকুন। এই পৃথিবীর দুঃখ থেকে আপনি বিদায় নিলেন। কিন্তু আপনাকে আমরা ভোরের শিশিরে খুঁজে বেড়াচ্ছি।’
অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় স্মৃতিচারণার মাঝে মাঝে গান দিয়ে। গান পরিবেশনায় ছিলেন ইফফাত আরা দেওয়ান, ফাহিম হোসেন চোধুরী, ইন্দ্রাণী কর্মকারসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী। আর স্মৃতিচারণায় বিষণ্ণ মনে কথার ঝাঁপি খুলেছেন সাদি মহম্মদের বাল্য বন্ধু থেকে শুরু করে বহু শিক্ষার্থী, সহশিল্পী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এছাড়া আবৃত্তি শুনিয়েছেন ইকবাল বাহার চৌধুরী।
ছোট বেলা থেকে সাদি মহম্মদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন আবদুল গাফফার। একসঙ্গে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছেন তারা। সেই স্মৃতির কিছু অংশ তুলে ধরেন শিল্পীর বন্ধু আবদুল গাফফার। তিনি জানান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান দারুণভাবে অবিকল গাইতে পারতেন সাদি মহম্মদ। গাফফার বলেন, ‘ও কিন্তু সাদি মহম্মদ ছিল না, সে তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিল! আমরা যখন স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছি, সবাই গোল হয়ে বসতাম, আর সে হেমন্তের গলায় আমাদের গান শোনাতো। পরবর্তীতে শান্তিনিকেতন থেকে গান শিখে আসার পর প্রথমবার তার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনি; অর্থাৎ এই সাদি মহম্মদকে শুনি। তার কাছ থেকে শুনেই রবীন্দ্রসংগীতের প্রেমে পড়েছিলাম আমি।’