মেধাস্বত্ব নিয়ে জলঘোলা কম হলো না দেশে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এটির কোনও স্বচ্ছ সুরাহা মেলেনি। এখনও একজন সংগীত স্রষ্টাকে মামলার বেড়াজাল পেরিয়ে নিজের স্বত্ব বা রয়্যালটি বুঝে নিতে হয়।
তবে আশার কথা গেল ক’বছর হলো বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস মেধাস্বত্ব নিয়ে বেশ খাটছে। সঙ্গে সিএমও হিসেবে বিএলসিপিএস (বাংলাদেশ লিরিসিস্ট, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি) কাজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও প্রযোজকদের সমন্বিত আগ্রহের অভাবে পুরো কার্যক্রমটি দানা বাঁধছে না। ফলে মেধাস্বত্ব বা সিএমও’র সুফল ঘরে উঠছে না সঠিক শিল্প-স্রষ্টাদের হাতে।
মূলত এসব জটিলতা কিংবা বাধা নিরসনে ৪ জুন দিনব্যাপী একটি বিশেষ কর্মশালা হয়েছে রাজধানীর সিক্স সিজন হোটেলে। ডব্লিউআইপিও (ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন) এবং জাপান কপিরাইট অফিসের সহযোগিতায় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ও বিএলসিপিএস-এর যৌথ আয়োজনে এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ডব্লিউআইপিও এবং আইপিআরএস (ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি)-এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করেন।
এরপর কপিরাইট রেজিস্ট্রার মোঃ দাউদ মিয়া, এনডিসি (অতিঃ সচিব) দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
উদ্বোধনের পর পর্যায়ক্রমে মোট ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম সেশনের বিষয় ছিলো- স্থানীয় সিএমও’র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ডব্লিউআইপিও-এর কার্যক্রম। সেশনটি পরিচালনা করেন সংস্থাটির কপিরাইট বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মিয়ুকি মনরইং।
দ্বিতীয় সেশনের বিষয় ছিলো ‘বিশ্বজুড়ে সংগীত প্রণেতাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিনিধিত্ব করা এবং কার্যকরভাবে সংগীত প্রণেতাদের কাছে রয়্যালটি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সিআইএসএসি-এর ভূমিকা এবং উদ্যোগসমূহ’। এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন সিআইএসএসি (ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব সোসাইটিজ অব অথরস অ্যান্ড কমপোজার্স)-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর বেনজামিন এনজি।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর অনুষ্ঠিত দিনের তৃতীয় সেশনের বিষয় ছিল–‘সংগীত প্রণেতা এবং সংগীতের শ্রোতা/ভোক্তাদের জন্য একটি সৃজনশীল ইকোসিস্টেম তৈরিতে স্থানীয় সিএমওগুলির ভূমিকা: সিএমওগুলি আপনার প্রতি কী অবদান রাখতে পারে’।
‘বাংলাদেশে কপিরাইট এবং রিলেটেড রাইটসের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে সংগীত প্রণেতা এবং সৃজনশীল শিল্পকে সমর্থন করার জন্য যে সকল সহযোগিতা দিতে পারে’- এই বিষয়ের ওপর দিনের চতুর্থ সেশনটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার মোঃ দাউদ মিয়া।
দিনের শেষ সেশনে বিএলসিপিএস-এর বর্তমান কার্যক্রমের অবস্থা এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এর সিইও মাইলস ব্যান্ড প্রধান হামিন আহমেদ।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে অংশ নেন সংগীতের নানা শাখার শীর্ষস্থানীয়রা। এরমধ্যে রয়েছেন নকীব খান, মাকসুদুল হক, শহীদ মাহমুদ জঙ্গি, শেখ মনিরুল ইসলাম টিপু, শওকত আলী ইমন, প্রিন্স মাহমুদ, অর্ণব, বালাম, আলিফ আলাউদ্দিন, রাহুল আনন্দ, প্রীতম হাসান, জুনায়েদ ইভানসহ অনেকে।
বলা দরকার, বর্তমানে বিএলসিপিএস-এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি অলাভজনক ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে, যার নেতৃত্বে আছেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।