আগের আসরের খরা কাটিয়ে ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পূর্ণ হতে চলেছে তারায় তারায়। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো জলঘেরা ইতালির ভেনিস লিদো দ্বীপে আর এক মাস পরেই (২৮ আগস্ট) এর ৮১তম আসরের পর্দা উঠবে।
গত বছর হলিউডে অভিনয়শিল্পী ও গল্পকার-চিত্রনাট্যকারদের ধর্মঘটের কারণে তারকা-শূন্যতায় ভেনিসের লালগালিচা ছিল মলিন। তবে এবার পয়লা রাত থেকেই হেভিওয়েট তারকাদের জৌলুস ফিরছে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, লেডি গাগা, নিকোল কিডম্যান, কেট ব্ল্যানচেট, জর্জ ক্লুনি, ব্র্যাড পিট, ড্যানিয়েল ক্রেগ, ওয়াকিন ফিনিক্স, মনিকা বেলুচ্চি, উইনোনা রাইডার, মাইকেল কিটন, টিল্ডা সুইনটন, জেনা ওর্তেগা আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেবেন।
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালাৎসো দেল সিনেমার সালা গ্র্যান্দে রয়েছে উদ্বোধনী আয়োজন। উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন ইতালিয়ান অভিনেত্রী এজভেভা আলভিতি। উৎসব চলবে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
মূল প্রতিযোগিতা
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের মর্যাদাসম্পন্ন স্বর্ণসিংহ পুরস্কার জয়ের পাঁচ বছর পর ‘জোকার’-এর বহুল প্রত্যাশিত সিক্যুয়েল আসছে। এবারের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের অন্যতম আকর্ষণ ‘জোকার: ফোলি আ দোঁ’। এবারের পর্বেও পরিচালকের আসনে টড ফিলিপস। স্বর্ণসিংহ জয়ের পর ১০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যবসা করেছে ‘জোকার’। এরপর অস্কারে ১১টি বিভাগে মনোনীত হয় এটি। এতে মানসিক ভারসাম্যহীন আর্থার ফ্লেক চরিত্রে অনবদ্য নৈপুণ্য দেখিয়ে আমেরিকান তারকা ওয়াকিন ফিনিক্স সেরা অভিনেতার অস্কার জিতেছেন। নতুন কিস্তিতে ব্লকবাস্টার কমিকসের চরিত্র জোকার রূপে যথারীতি তিনিই আছেন। তার সঙ্গে হার্লি কুইন চরিত্রে যুক্ত হয়েছেন আমেরিকান তারকা লেডি গাগা। ছয় বছর পর ভেনিসে ফিরছেন তিনি। ২০১৮ সালে এই উৎসবে প্রতিযোগিতার বাইরে নির্বাচিত ‘অ্যা স্টার ইজ বর্ন’ তাকে অস্কারে সেরা গায়িকার পুরস্কার ও সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন এনে দিয়েছে।
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আলবের্তো বারবেরা গত ২৩ জুলাই এবারের আসরের অফিসিয়াল সিলেকশন ঘোষণা করে ‘জোকার: ফোলি আ দোঁ’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছবিটির মাধ্যমে টড ফিলিপস নিজেকে সমকালীন আমেরিকান সিনেমার অন্যতম মৌলিক পরিচালক হিসেবে পাকাপোক্ত করেছেন। তিনি ও তার চিত্রনাট্যকার কী লিখেছেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। ওয়াকিন ফিনিক্স পুরোপুরি অবিশ্বাস্য।’
এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে মোট ২১টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে চিলির পাবলো লারাইন পরিচালিত ‘মারিয়া’ লাইমলাইট কেড়ে নিতে পারে। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আমেরিকান অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এতে দেখা যাবে, সত্তর দশকে প্যারিসে আমেরিকান বংশোদ্ভুত গ্রিসের বিখ্যাত অপেরা গায়িকা মারিয়া কালাসের জীবনের শেষ দিনগুলো কেমন কেটেছে।
অসম বয়সী প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘বেবিগার্ল’ চলচ্চিত্রে করপোরেট ব্যক্তিত্ব এক নারী নিজের অফিসের তরুণ ইন্টার্নের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ডাচ নারী হালিনা রাইনের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা নিকোল কিডম্যান, হ্যারি ডিকিনসন, আন্তোনিও বান্দেরাস, জ্যঁ রেনো, সোফি ওয়াইল্ড।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত আমেরিকান সাহিত্যিক উইলিয়াম এস. বারোসের উপন্যাস অবলম্বনে ইতালির লুকা গুয়াদানিনো পরিচালিত ‘কুইয়ার’ চলচ্চিত্রের পটভূমি চল্লিশের দশক। এতে এক তরুণের প্রেমে পড়ে মধ্যবয়সী আমেরিকান এক প্রবাসী। অভিনয়ে ড্যানিয়েল ক্রেগ ও জেসন শোয়ার্ৎজম্যান। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আলবের্তো বারবেরা মনে করেন, ‘আমার দৃষ্টিতে ড্যানিয়েল ক্রেগের জীবনের সেরা পারফরম্যান্স এটাই।’
ইংরেজি ভাষায় খ্যাতিমান স্প্যানিশ নির্মাতা পেদ্রো আলমোদাভারের প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য রুম নেক্সট ডোর’ এক অপূর্ণ মা ও রুষ্ট মেয়েকে কেন্দ্র করে। এতে অভিনয় করেছেন জুলিয়ান মুর ও টিল্ডা সুইনটন। ২০২২ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকদের প্রধান ছিলেন আমেরিকান অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর।
আশির দশকের আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘দ্য অর্ডার’ ছবিতে এফবিআই এজেন্টের ভূমিকায় আছেন ব্রিটিশ তারকা জুড ল। এতে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিকোলাস হল্ট, টাই শেরিড্যান ও জার্নি স্মলেট।
৭০ মিলিমিটারে নির্মিত ২১৫ মিনিটের দীর্ঘ ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ছবিতে দেখা যাবে, নাৎসিদের বন্দিশিবির থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া হাঙ্গেরির বংশোদ্ভুত এক ইহুদি স্থপতির আমেরিকায় পাড়ি জমানোর গল্প। অভিনয়ে আড্রিয়েন ব্রডি, ফেলিসিটি জোন্স ও গাই পিয়ার্স।
ইতালিয়ান মাফিয়া বস মাত্তেও মেসিনা দেনারোর দীর্ঘ পলাতক জীবনের ছায়া অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘সিসিলিয়ান লেটারস’। এটি পরিচালনা করেছেন ফাবিও গ্রাসাদোনিয়া ও আন্তোনিও পিয়াৎসা।
ইতালির মোট পাঁচ পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন মূল প্রতিযোগিতায়। তাদের মধ্যে জিয়ান্নি আমেলিয়োর ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ ছবির গল্প প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একজন চিকিৎসককে কেন্দ্র করে।
নারী পরিচালক
মূল প্রতিযোগিতায় থাকা ২১টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছয়টি পরিচালনা করেছেন সাত নারী। তাদের মধ্যে কেবল গ্রিসের আথিনা র্যাচেল সাংগারি ১৪ বছর আগে ‘অ্যাটেনবার্গ’-এর সুবাদে একবার স্বর্ণসিংহের জন্য মনোনীত হন। এবার রয়েছে ব্রিটিশ সাহিত্যিক জিম ক্রেসের উপন্যাস অবলম্বনে ইংরেজ মধ্যযুগের পটভূমিতে তার পরিচালিত ‘হারভেস্ট’। এতে অভিনয় করেছেন ক্যালেব লান্ড্রি জোন্স।
ফরাসি দুই বোন দেলফিন ও মুরিয়েল কুলাঁ পরিচালিত ‘দ্য কোয়ায়েট সান’ ছবিতে দেখা যাবে, এক বাবা ও তার ডানপন্থী বড় ছেলের মধ্যকার সম্পর্কের গল্প। এতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফরাসি তারকা ভাসোঁ লাদোঁ।
জর্জিয়ার নারী ডেয়া কলামবেগাশভিলি পরিচালিত ‘এপ্রিল’-এর গল্প অবৈধ গর্ভপাতের জন্য অভিযুক্ত এক প্রসূতি বিশেষজ্ঞকে কেন্দ্র করে। ইতালির মাউরা দেলপেরো পরিচালিত ‘ভেরমিলিয়ো’র পটভূমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইতালির একটি গ্রাম। ফ্রান্সের এমানুয়েল মুরে পরিচালিত ‘থ্রি ফ্রেন্ডস’ ও
ইতালির জিউলিয়া লুইস স্টাইগারওয়াল্ট ‘দিভা ফুতুরা’য় আশির দশকে ইতালির পর্নো তারকাদের উত্থান তুলে ধরা হয়েছে।
মূল প্রতিযোগিতায় এবার কোনও কৃষ্ণাঙ্গ পরিচালক জায়গা পাননি। যদিও গত দুই আসরে কালোদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আভা ডুভার্নে (অরিজিন, ২০২৩) ও ফ্রান্সের আলিস দিওপ (সেন্ট ওমের, ২০২২)।
এশিয়া থেকে মূল প্রতিযোগিতায় রয়েছে সিঙ্গাপুরের সিউ হুয়া ইয়েয়ো পরিচালিত ‘স্ট্রেঞ্জার আইস’ ও চীনের ওয়াং বিং পরিচালিত ‘ইয়ুথ–হোমকামিং’। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের ৮১ বছরের ইতিহাসে মূল প্রতিযোগিতায় প্রথমবার জায়গা পেলো সিঙ্গাপুর।
প্রতিযোগিতার বাইরে
হলিউডের দুই হার্টথ্রব জর্জ ক্লুনি ও ব্র্যাড পিট আবারও একসঙ্গে অভিনয় করেছেন জন ওয়াটসের অ্যাকশন-কমেডি ‘উলফস’ চলচ্চিত্রে। এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে প্রতিযোগিতার বাইরে। ছবিটির গল্পে দুই স্বাধীন গোয়েন্দা অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধ ধামাচাপা দিতে জোট বাঁধে।
এবারের আসরের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার বাইরে নির্বাচিত টিম বার্টনের ‘বিটলজুস বিটলজুস’। ১৯৮৮ সালের ভৌতিক কমেডি ‘বিটলজুস’-এর বহুল কাঙ্ক্ষিত সিক্যুয়েল এটি। এতে প্রধান চরিত্রে ফিরছেন মাইকেল কিটন। এছাড়া অভিনয় করেছেন উইনোনা রাইডার, ক্যাথেরিন ও’হারা, মনিকা বেলুচ্চি, উইলেম ড্যাফো, জেনা ওর্তেগা ও জাস্টিন থেরু। তারা সবাই প্রদর্শনীর আগে টিম বার্টনের সঙ্গে লালগালিচায় হাঁটবেন।
ব্যান্ডের গান-বাজনা
প্রতিযোগিতার বাইরে রয়েছে কেভিন ম্যাকডোনাল্ড ও স্যাম রাইস-এডওয়ার্ডস পরিচালিত ‘ওয়ান টু ওয়ান: জন অ্যান্ড ইয়োকো’। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন লেনন ও তার স্ত্রী ইয়োকো ওনোর সোনালি দিনগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এটি। নিউইয়র্কে দ্য বিটলস ব্যান্ডের পৌঁছানো ও শিয়া স্টেডিয়ামে প্রথম কনসার্ট বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র ‘থিংস উই সেইড টুডে’র প্রদর্শনী হবে উৎসবে। হরাইজন্স এক্সট্রা বিভাগে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার স্টিফেন মাল্কমাসের রক ব্যান্ড প্যাভমেন্টসকে কেন্দ্র করে অ্যালেক্স রস পেরির প্রামাণ্যচিত্র।
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে সাধারণত রাজনৈতিক আবহ দেখা যায় না। তবে এবারের আসরে ইউক্রেন-রাশিয়া ও ইসরায়েল-হামাস সংঘাত থেকে শুরু করে অভিবাসন, জলবায়ু বিপর্যয় এবং অতি-ডানপন্থী আন্দোলনের উত্থান সমকালীন অনেক চ্যালেঞ্জ প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে। এসব বিষয় প্রতিযোগিতার বাইরে থাকা কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যাবে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বাস্তবতা দেখা যাবে দুটি প্রামাণ্যচিত্রে। এগুলো হলো– নির্বাচিত রুশ পরিচালক আনাস্তাসিয়া ত্রফিমোভার ‘রাশানস অ্যাট ওয়ার’ এবং ইউক্রেনের ওলহা জাহিয়ের্বা পরিচালিত ‘সংস অব স্লো বার্নিং আর্থ’।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নির্মাতা আসিফ কাপাডিয়ার ‘২০৭৩’ প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যাবে, আগামী ৫০ বছরে পৃথিবী কেমন দাঁড়াবে এবং ভবিষ্যতে যেসব হুমকির মুখে পড়তে পারে মানুষ। বিশ্ব কীভাবে দ্রুত কর্তৃত্ববাদ, সহিংসতা ও জলবায়ু বিপর্যয়ের ঘূর্ণিতে নিমজ্জিত হচ্ছে সেটাই দেখানো হয়েছে এতে।
প্রতিযোগিতার বাইরে থাকা আরেক উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র সুইডেনের ইয়োরান হুগো উলসনের ‘ইসরায়েল প্যালেস্টাইন অন সুইডিশ টিভি ১৯৫৮-১৯৮৯’। হরাইজন্স এক্সট্রা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে মিউনিখ অলিম্পিকসে লাইভ টেলিভিশন সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘সেপ্টেম্বর ফাইভ’।
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসী মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সন্তানদের ঘিরে এরোল মরিস নির্মাণ করেছেন ‘সেপারেটেড’।
বিশাল দৈর্ঘ্য
ভেনিসের এবারের অফিসিয়াল সিলেকশনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রর দৈর্ঘ্য তুলনামূলক বড়। এগুলো হলো– ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ (৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট), ‘ইয়ুথ – হোমকামিং’ (২ ঘণ্টা ৩২ মিনিট), ‘কুইয়ার’ (২ ঘণ্টা ৩১ মিনিট), ফিলিপাইনের লাভ ডিয়াজ পরিচালিত ‘ফ্যান্টোসমিয়া’ (৪ ঘণ্টা ৫ মিনিট), ইতালির মাসিমো দানলফি ও মার্তিনা পারেন্তি পরিচালিত ‘বেস্টিয়ারিস, হারবারিয়া, লাপিডারিস’ (৩ ঘণ্টা ২৫ মিনিট)। এগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে প্রতিযোগিতার বাইরে থাকা চারটি টিভি সিরিজ। কারণ এগুলোর সাত থেকে ১০ পর্ব পর্যন্ত (৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট থেকে ৭ ঘণ্টা ২৮ মিনিট) চালানো হবে। এরমধ্যে ‘এম – সান অব দ্য সেঞ্চুরি’র ৪১২ মিনিটের প্রদর্শনী হবে।
একজন প্রামাণ্যচিত্র সাংবাদিক ও তার একটি রহস্যকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত উপন্যাস অবলম্বনে অস্কারজয়ী মেক্সিকান পরিচালক আলফনসো কোয়ারনের মনস্তাত্বিক থ্রিলারধর্মী ওয়েব সিরিজ ‘ডিসক্লেইমার’-এর সাত পর্বের প্রদর্শনী হবে উৎসবে। অ্যাপল টিভি প্লাসে আগামী অক্টোবরে এটি মুক্তি পাবে। এতে অভিনয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা কেট ব্ল্যানচেট ও কেভিন ক্লাইন।
দৈর্ঘ্য বড় হওয়ায় আয়োজক ও দর্শক ও পেশাদার চলচ্চিত্রকর্মীদের জন্য সময় নিয়ে হিমশিম খেতে হবে বৈকি! এ প্রসঙ্গে আলবের্তো বারবেরা বলেন, ‘চলচ্চিত্র জগতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের প্রত্যাশায় এই নিরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
অফিসিয়াল সিলেকশনে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিও আছে। যেমন মার্কো বেল্লোক্কিও পরিচালিত ‘ইফ আই মে চ্যাপ্টার টু’ (২০ মিনিট), আলিস রোরওয়াচার ও জেআর পরিচালিত ‘অ্যান আরবান অ্যালেগোরি’ (২১ মিনিট) ও নিকোলাস উইন্ডিং রেফনের ‘বিউটি ইজ নট অ্যা সিন’ (৭ মিনিট)। এছাড়া প্রতিযোগিতার বাইরে থাকা জাপানের তাকেশি কিতানো পরিচালিত ‘ব্রোকেন রেজ’ ছবির দৈর্ঘ্য মাত্র ৬২ মিনিট।
অস্কার ফেভারিট
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবকে হলিউডের পুরস্কার মৌসুমের শুরু হিসেবে দেখা হয়। এতে নির্বাচিত ছবিগুলো অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের বিভিন্ন বিভাগে ফেভারিট থাকে। গত সাতটি স্বর্ণসিংহ জয়ী ছবির মধ্যে পাঁচটি অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের মনোনয়ন পেয়েছে। এগুলো হলো গ্রিসের ইয়োর্গোস লানতিমোসের ‘পুয়োর থিংস’, ক্লোয়ি জাও পরিচালিত ‘নোম্যাডল্যান্ড’, টড ফিলিপসের ‘জোকার’, মেক্সিকোর আলফনসো কোয়ারনের ‘রোমা’ ও গিয়ের্মো দেল তোরোর ‘দ্য শেপ অব ওয়াটার’।
গত আসরে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হওয়া সাতটি ছবি অস্কারে মোট ২৪টি মনোনয়ন পেয়েছে। এরমধ্যে ‘পুয়োর থিংস’ চারটি বিভাগে অস্কার জিতেছে। এতে অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার জিতেছেন এমা স্টোন। গতবার মূল প্রতিযোগিতায় থাকা ব্র্যাডলি কুপারের ‘মায়েস্ট্রো’ অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনীত হয়েছে। এছাড়া ৮০তম ভেনিস উৎসবে প্রদর্শিত ‘প্রিসিলা’, ‘সোসাইটি অব দ্য স্নো’, ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার’, ‘এল কন্দে’ অস্কারে বিভিন্ন বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর উৎসবের সমাপনীতে মর্যাদাসম্পন্ন স্বর্ণসিংহ বিজয়ী চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করবেন মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের প্রধান বিচারক ইজাবেল উপার। উৎসবটিতে ১৯৮৮ সালে ‘স্টোরি অব উইমেন’ ও ১৯৯৫ সালে ‘লা সিরিমনি’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন তিনি। ২০০৫ সালে ‘গ্যাব্রিয়েল’সহ পুরো ক্যারিয়ারের জন্য তাকে বিশেষ স্বর্ণসিংহ পুরস্কার দেওয়া হয়।
৭১ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিনেত্রীর নেতৃত্বে এবারের বিচারক প্যানেলে থাকছেন চীনা অভিনেত্রী জ্যাং জিয়ি, আমেরিকান পরিচালক জেমস গ্রে, ব্রিটিশ পরিচালক অ্যান্ড্রু হেইগ, পোলিশ পরিচালক আগনিয়েস্কা হলান্ড, ব্রাজিলিয়ান পরিচালক ক্লেবার মেনদোনচা ফিলু, মরিটানিয়ান পরিচালক আবদের রহমান সিসাকো, ইতালিয়ান পরিচালক জিউসেপ্পে তোরনাতোরে ও জার্মান পরিচালক ইউলিয়া ফন হাইঞ্জ।
৮১তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে আজীবন সম্মাননা হিসেবে স্বর্ণসিংহ পাবেন তিনবার অস্কার মনোনীত আমেরিকান অভিনেত্রী সিগোর্নি উইভার ও অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক পিটার ওয়্যার। এ উপলক্ষে দেখানো হবে পিটার ওয়্যার পরিচালিত ‘মাস্টার অ্যান্ড কমান্ডার: দ্য ফার সাইড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ (২০০৩)। তার বিখ্যাত ছবির তালিকায় রয়েছে ‘উইটনেস’ (১৯৮৫), ‘ডেড পয়েটস সোসাইটি’ (১৯৮৯), ‘দ্য ট্রুম্যান শো’ (১৯৯৮)।
মিসরের ফেরা
ভেনিসের অফিসিয়াল সিলেকশনে একযুগ পর ফিরেছে মিসর। দেশটির ‘সিকিং হ্যাভেন ফর মিস্টার র্যাম্বো’ স্থান পেয়েছে হরাইজন্স এক্সট্রা বিভাগে। এটি খালেদ মনসুর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। মিসর ও সৌদি আরবের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির গল্প ৩০ বছর বয়সী এক লোককে কেন্দ্র করে। প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রতিবেশীকে কামড়ে দেওয়া প্রিয় কুকুরের জন্য আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করে লোকটি। ছবিটির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে উৎসবে থাকবে ফিল্ম ক্লিনিক।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মিসরের ইব্রাহিম এল বাতুত পরিচালিত ‘উইন্টার অব ডিসকন্টেন্ট’ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের হরাইজন্স বিভাগে প্রদর্শিত হয়।
আরব দেশগুলোর মধ্যে তিউনিসিয়ার মেহেদি বরসোয়ুই পরিচালিত ‘আইশা’ স্থান পেয়েছে হরাইজন্স বিভাগে। এটি তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। প্রতিযোগিতার বাইরে ভেনিস ক্ল্যাসিকস বিভাগে রয়েছে লেবাননের ফেইরুজ সেরহাল পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মারুন রিটার্নস টু বেরুত’।