‘মহরত’ নাকি ‘ডুব-কথা’র আসর?

বিমানবন্দরের কাছাকাছি নতুন পাঁচ তারকা হোটেল লা ম্যারিডিয়ান। গেল ক’দিন ধরে এটি যেনো সেজে আছে ঢাকার মাঝে এক টুকরো ‘ভারত’ রূপে। কারণ, প্রথমে কলকাতার শ্রাবন্তী, পরে জিৎ এবং সবশেষে এখানে অস্থায়ী বাসা বেঁধেছেন ইরফান খান, পার্ণো মিত্র এবং তাদের সহযোগিরা।

ডুব-কথার আসরে ইরফান খানের সঙ্গে রোকেয়া প্রাচী, তিশা ও পার্ণো মিত্র।শুক্রবার (১৮ মার্চ) রাতে সেই এক টুকরো ভারতে ডাক পড়েছে দেশীয় গণমাধ্যমের। ডেকেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। উদ্দেশ্য, ২০ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘ডুব’ ছবির মহরত এবং সেই ফাঁকে ছবি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপচারিতা। যদিও সব শেষে ফিরতি পথে অনেকেরই আনমনে মনের কাছে প্রশ্ন ছিল এমন, এটা কি ‘মহরত’ ছিল, না ‘ডুব-কথা’র অন্যরকম আসর?

রাত আটটার একটু পরে শরীরে সাদা শার্ট ঝুলিয়ে নিজের রূম ছেড়ে অনুষ্ঠানস্থলে খুব নীরবে আসলেন ইরফান খান, যার জন্য উপস্থিত সবার অস্থির অপেক্ষা। অনেকটা বাধাহীনভাবে হেঁটে গিয়ে মঞ্চের সামনের টেবিলে গিয়ে বসলেন ইরফান। অথচ তার উপস্থিতি টেরই পেলেন না গণমাধ্যমকর্মীরা! খানিক পরে টের পেয়ে মৌচাক বনে গেলেন তিনি আর মৌমাছি সংবাদকর্মীরা। স্বাভাবিক। তেমটাই তো ঘটার কথা।

ডুব-কথায় মজেছেন ছবির প্রধান দুই নায়ক। অভিনেতা ইরফান ও নির্মাতা ফারুকী।এদিকে জটলা ভাঙ্গার অপেক্ষা না করে মহরত অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেল।

‘মহরত’ এর ছোট্ট পর্ব শেষে বক্তব্য পর্বের শুরুটা করে দিলেন ছবিটির অন্যতম প্রযোজক আব্দুল আজিজ। বললেন, ‘আমাদের (জাজ মাল্টিমিডিয়া) প্রথম টার্গেট ছিল বাংলাদেশের মার্কেট। তা আমরা পেয়েছি। এরপর কলকাতার মার্কেট। সেটাও পাওয়ার পথে এখন। আমাদের তৃতীয় টার্গেট ছিল বলিউড। আশা করি ওটাও আগামী দু’বছরের মধ্যে পেয়ে যাবো। এবং আগামী পাঁচ বছরের ভেতরে আমরা হলিউডের মার্কেটে প্রবেশ করব।’

ডুব-কথার আসরের ফাঁকে হচ্ছে ‘মহরত’!আবদুল আজিজের বক্তব্যের পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। চরিত্রের জন্য শিল্পী নির্বাচন প্রসঙ্গে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘অনেক দিন যাবত গোপনে গোপনে স্ক্রিপ্টিং করছিলাম। চরিত্রগুলো তৈরি করতে গিয়ে আমি তিশা ও ইরফান খানের কথা ভেবেছি। দেখছিলাম এদের ছাড়া হবে না। ফাইনালি দুজনকেই পেয়েছি। আগামী একমাস হচ্ছে শুধু আমার সেই ভাবনাগুলো সেলুলয়েডে তুলে আনা।’ ছবির বাংলা নামকরণ ‘ডুব’ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুকী বলেন, ‘‘ছবির ইংরেজি নাম ‘নো বেড অব রোজেস’। এর আক্ষরিক বাংলা যেটা হয়, সেটা ছবির নাম হিসেবে ঠিক যাচ্ছিলো না। অনেক চিন্তার পর দেখলাম, মানুষ যখন পানিতে ডুবে যায় সেখান থেকে উঠার জন্য অনেক চেষ্টা করে। অনেক সময় উঠতে পারে, অনেক সময় পারে না। ভেবে দেখলাম ব্যাপারটা আমার ছবির গল্পের সঙ্গে যায়। সেখান থেকে ‘ডুব’-এর আবিষ্কার।’
এদিকে একটু পরেই মুখ খুললেন ইরফান খান। জানালেন, ফিল্ম স্কুল থেকে পাশ করার পর কলকাতা থেকে অনেকগুলো বাংলা সিনেমার অফার পেয়েছিলেন, কিন্তু করা হয়নি। পরবর্তীতে আর কোনও বাংলা ছবি কিংবা ফারুকীর অন্য কোনও সিনেমায় দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ইরফান বলেন, “আমি কখনওই ভবিষ্যত নিয়ে ভাবি না। আমি বর্তমানের কাজটি উপভোগ করতে পছন্দ করি। ফারুকীর সঙ্গে পরবর্তীতে কাজ হবে কিনা জানি না, কিন্তু ‘ডুব’ আমার জন্য বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা হবে।”

ডুব-কথার ফাঁকে ছবির প্রধান দুই অভিনেত্রীকে নিয়ে ইরফানের ক্যামেরা পোজ।কথায় কথায় ইরফান আরও জানালেন, অর্ণবের গান ও রবীন্দ্র সংগীত তার খুব ভালো লাগে। আপনি কি আপনার অভিনয়কে কন্ট্রোল করতে পারেন? জবাবে বলেন, ‘আমি আমার ন্যাচারাল অভিনয়টা করার চেষ্টা করি। একই সঙ্গে পরিচালক যেভাবে বলেন সে অনুযায়ী নিজেকে ভাঙ্গতে চেষ্টা করি। চেষ্টা থাকে ইউনিক কিছু করতে।’ তিনি আরও বললেন, ‘আমি ফারুকীকে বিশ্বাস করে নিজেকে তার কাছে সমপর্ণ করেছি। সে-ই আমাকে কন্ট্রোল করবে।’

এদিকে ‘ডুব’ এর দেশীয় দুই অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ও তিশা শুধু একটু করে একই সুরে বললেন, ছবিটিতে ইরফানের সঙ্গে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ভালোই হবে। তিশা আরেকটু স্পষ্ট করে বললেন, ‘সম্ভবত এ ছবির মধ্য দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক কোনও ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছি।’ এদিকে ছবির অন্যতম প্রযোজক আবদুল আজিজের এক প্রশ্নের জবাবে খানিক মজা করেই বলেন ইরফান খান বললেন, ‘আমি আপনার কোম্পানিতে কাজ করতে চাই, তাই এ ছবিতে সহ-প্রযোজক হয়েছি!’

হাস্যোজ্জ্বল ইরফান। মুগ্ধ দৃষ্টি ফারুকীর।অন্যদিকে কলকাতার অভিনেত্রী পার্ণো মিত্র অনেকক্ষণ পর ফ্লোর পেয়ে এ ছবিতে অন্তর্ভুক্তির গল্প বললেন এভাবে, ‘ফারুকী একদিন কলকাতায় আমার অডিশন নিবেন বলে আট ঘন্টা খালি আড্ডা মারলেন! বুঝেন অবস্থা। এছাড়া আপনি যখন আগাম মেসেজ পান, আপনার সহ-অভিনেতা ইরফান খান, তখন আপনার কি অবস্থা হবে? আমারও সেসময় তাই হয়েছিল।’

‘ডুব’ কথার এ অনুষ্ঠানে মহরত আর গল্পের বাইরেও মজার একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। যেখানে ইরফান খান ও পার্নো মিত্র বাংলাদেশে আসার পর (১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল) তিন দিনে বিভিন্ন লোকেশনে ঘুরে বেড়ানোর মজার চিত্র উঠে এসেছে।

‘ডুব- নো বেড অব রোজেস’ ছবির শ্যুটিং শুরুর আগেই ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ দেখিয়ে দিলেন এর নির্মাতা। সামনে না জানি আরও কত কী অপেক্ষা করছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মগজে। এমন বিস্ময় নিয়ে শুক্রবার প্রায় মধ্যরাতে ভাঙলো মনমুগ্ধকর ডুব-কথার আসর।

টিম ‘ডুব- নো বেড অব রোজেস’।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ বাংলা ট্রিবিউন

/জেডএ/এমএম/