‘কাঁটা লাগা’ পরিচয়েই থাকতে চেয়েছিলেন শেফালি

দুই দশক আগে, ‘কাঁটা লাগা’ গান দিয়ে ঝড় তুলেছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা। এতবছর পেরিয়ে গেলেও এতটুকু ম্লান হয়নি সেই গানের রেশ। এমনকি এখনও শুধুমাত্র এই গানের জন্যই শেফালিকে আলাদা করে মনে রেখেছেন সবাই। কিন্তু শুক্রবার (২৭ জুন) মধ্যরাতে হঠাৎই থেমে গেলো তার হৃদয়ের স্পন্দন। মাত্র ৪২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলিউডের এই তারকা।

মিউজিক ভিডিও, রিয়েলিটি শো এবং সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন শেফালি। ২০০৪ সালে সালমান খান, অক্ষয় কুমার এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সাথে ‘মুঝসে শাদি কারোগি’ সিনেমা দিয়ে তার বলিউড সিনেমায় অভিষেক।শেফালি জারিওয়ালাকিন্তু শেফালি এখানেই থামেননি। তিনি ভাষাগত সীমানা অতিক্রম করে ২০১১ সালে কন্নড় ছবি ‘হুদুগারু’তে অভিনয় করেন। এই ছবিতে জনপ্রিয় গান ‘পঙ্কজা’-তে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মমতা শর্মা, ভি. হরিকৃষ্ণ এবং নবীন মাধব। ‘হুদুগারু’ সিনেমাটি বক্স অফিসে ৯ কোটি রুপি আয় করে সেসময়।

তবে ‘কাঁটা লাগা’ গানের জন্যই তিনি অধিক সমাদৃত ছিলেন। এই গানের প্রতি শেফালির ছিল তীব্র ভালোবাসা। এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি এই ডাকনামে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন কিনা। তিনি হেসে উত্তর দিয়ছিলেন, “কখনোই না। সারা বিশ্বে কেবল একজনই ‘কাঁটা লাগা’ মেয়ে থাকতে পারে এবং সে আমি! আমি এই নামটি ভালোবাসি। এবং আমি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ‘কাঁটা লাগা’ মেয়ে হিসাবে পরিচিত থাকতে চাই।”শেফালি জারিওয়ালাশেফালি ছিলেন ভীষণ ফিটনেস ফ্রিক। ফিট এবং সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা করতেন। কিন্তু এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি, তিনি মৃগীরোগের সাথে লড়াই করেছিলেন। যদিও সে কথা খুব কম মানুষই জানতেন।

তিনি তার কেরিয়ারের শুরুর দিকে এটি কাউকেই জানতে দেননি। কাজে প্রভাব পড়তে দেননি। কিন্তু প্রতিনিয়তই এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার খিঁচুনি অনুভব করেন। তারপর দীর্ঘদিন মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। তবে চিকিৎসা, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক জোরে  অভিনেত্রী ভাল থাকার চেষ্টা করতেন।শেফালি জারিওয়ালাবলা প্রয়োজন, ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইন্ডি পপ গান ‘কাঁটা লাগা’র রিমেক ভিডিওর মাধ্যমে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান শেফালি জারিওয়ালা। সত্তরের দশকের হিন্দি সিনেমা ‘সমৃদ্ধি’র গানের রিমেকটি সে সময় তুমুল জনপ্রিয় হয়। গানের সাহসী উপস্থাপনায় শেফালি হয়ে ওঠেন আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। এরপর ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ নামে পরিচিতি পান তিনি। এরপর সব মিলিয়ে ৩৫টির বেশি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন শেফালি।

অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জীবনও সব সময় আলোচনায় ছিল। তিনি প্রথমে হরমিত গুলজারকে বিয়ে করেছিলেন। ২০০৯ সালে স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ এনেছিলেন অভিনেত্রী। সেই বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর অন্তরালেই ছিলেন।

বেশ কয়েক বছর পর পার্টনার পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে জুটিবেধে ‘নাচ বলিয়ে’-এর পঞ্চম সিজনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৪ সালে বিয়েও করেন তারা। শেফালিকে নিয়ে সেই সময়ও উন্মাদনা কম হয়নি। তবে সবটাই ‘কাঁটা লাগা’-র দৌলতে। তারপর ‘বিগ বস ১৩’-এ প্রতিযোগী ছিলেন। ফের চর্চায় আসেন তিনি। স্বামী পরাগকে নিয়ে সুখেই সংসার করছিলেন শেফালি। শেফালি জারিওয়ালাকিছুদিন আগে, শেফালি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, শৈশবে তার মৃগী রোগ হয়েছিল এবং এই রোগের কারণে তিনি মারাও যেতে পারেন। তবে তিনি তার জীবনযাত্রা ও সাহস দিয়ে রোগটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।

মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা ও নারী-অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন শেফালি জারিওয়ালা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলামেলা ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতির জন্য তিনি ছিলেন আলোচনায়।

১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন শেফালি। তিনি গুজরাটের সরদার বল্লভভাই পটেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।শেফালি জারিওয়ালাবলা প্রয়োজন, ২৭ জুন গভীর রাতে শেফালি হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তার স্বামী পরাগ ত্যাগী এবং আরও তিনজন তাকে মুম্বাইয়ের বেলভিউ মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও অপ্রকাশিত।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে