ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ‘ইত্যাদি’র সেট, মধ্যরাতে শুটিং শুরু

সেই নব্বই দশক থেকেই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দৃশ্যধারণ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত সমৃদ্ধ জেলা ঝিনাইদহে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বিষয়টা সেটি হলো, মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার মহেশপুরের দত্তনগরের দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠের মাঝখানে, বটবৃক্ষ চত্বরে।

বিকেল ৩টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল।‘ইত্যাদি’র মঞ্চে গান গাইছেন মনির খানসারাদিন রৌদ্রোজ্জ্বল থাকলেও অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে থেকেই ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কখনও ভারি বৃষ্টি। চলে টানা চার-পাঁচ ঘন্টা।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সময়মত পর্ব ধারণ শুরু করা যায়নি। এমনকি, কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘ইত্যাদি’র সেট, লাইট, ক্যামেরা ও অন্যান্য শুটিং সরঞ্জাম।

ঝড় থামার পর রাত বারোটার দিকে শুরু হয় ‘ইত্যাদি’র পর্ব ধারণ। চলে একটানা ভোররাত পর্যন্ত।

এবারের অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহের কিংবদন্তী লোককবি পাগলা কানাইয়ের কথা ও সুরে একটি লোক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী ও তসিবা। গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন মেহেদী। গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায় কিশোর দাশের সুর ও সংগীত পরিচালনায় আরেকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ঝিনাইদহের সন্তান শিল্পী মনির খান।

এছাড়াও রয়েছে ঝিনাইদহকে নিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপার সন্তান মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছে মোহাম্মদ শাহিন ইসলাম, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।

দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ঝিনাইদহকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা ঝিনাইদহের ব্র্যান্ডিং পণ্য কলা ও  পান নিয়ে রচিত একটি নাট্যাংশে স্থানীয় ভাষায় অভিনয় করেন।‘ইত্যাদি’র দর্শকপর্বরয়েছে ঝিনাইদহের ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন, এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বীজ উৎপাদন খামার হিসাবে পরিচিত দত্তনগর কৃষি ফার্ম এবং ঝিনাইদহের ক’জন স্মরণীয়-বরণীয় কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের ওপর প্রতিবেদন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের সমাজকর্মী পাখি দরদী মানবিক মানুষ জহির রায়হানের উপর রয়েছে একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার একটি পাড়ায় পানি কষ্টে থাকা তেমনি কিছু মানুষের ওপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। এছাড়া, চিঠিপত্র পর্বে ঝিনাইদহের মহেশপুরে বন্য প্রাণীর বন্ধু হয়ে ওঠা প্রাণীপ্রেমী নাজমুল হোসেনের কর্মকান্ডের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন দেখানো হবে।

বলা প্রয়োজন, ৩০ মে হলো সমুদ্র সিংহ বা সী লায়ন দিবস। তাই এবারের বিদেশি প্রতিবেদনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যান ডিয়েগো শহরের প্রশান্ত মহাসাগরের একটি অসাধারণ সৌন্দর্য সৈকত লা-হোয়-আ কোভে বিশ্রাম নিতে আসা সমুদ্র সিংহ বা সী লায়নের ওপর একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন।

এছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের উপর রয়েছে বেশ কিছু নাট্যাংশ। পোস্টার নির্যাতন, দালালের দৌরাত্ম্য, স্বভাব সংস্কার, প্রবাদ-প্রবচনের পেছনের গল্প, ফেসবুকের সংবাদ সেবা, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা, ঘরোয়া আলোচনায় পশু-পাখি প্রীতি, রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িকে নাম সংকট, দোষ খুঁজে দোষ ধরা, কথা শুনে অযথা ব্যথাসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।‘ইত্যাদি’র একাংশএবারের ‘ইত্যাদি’তে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন- বাবুল আহমেদ, আবদুল্লাহ রানা, আব্দুল আজিজ, সুভাশিষ ভৌমিক, আমিন আজাদ, আঞ্জুমান আরা শিরিন, রকি খান, জিল্লুর রহমান, কামাল বায়েজিদ, মুকিত জাকারিয়া, জাহিদ শিকদার, আশরাফুল আলম সোহাগ, আনোয়ার শাহী, নজরুল ইসলাম, আনন্দ খালেদ, সুমন পাটোয়ারি, শাহেদ আলী, সুজাত শিমুল, তারিক স্বপন, আনোয়ারুল আলম সজল, সাইদুর রহমান পাভেল, বেলাল আহমেদ মুরাদ, মনজুর আলম, বিলু বড়-য়া, মতিউর রহমান, রাজীব সালেহীন, সাদিয়া তানজিন, সাবরিনা নিসা, সুর্বনা মজুমদারসহ আরো অনেকে।

বরাবরের মত এবারও ‘ইত্যাদি’র শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।

উল্লেখ্য, ‘ইত্যাদি’র এই পর্বটি প্রচার হবে ৩০ মে, বাংলাদেশ টেলিভিশনে, রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর।

যথারীতি ‘ইত্যাদি’ রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। স্পন্সর করেছে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।