'প্রাথমিক ধারণার চেয়েও বেশি ভয়াবহ জিকা ভাইরাস'

মশার মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে থাকেল্যাটিন আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া জিকা ভাইরাস ধারণার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে ব্রাজিলের বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা জানিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, জিকার কারণে অস্বাভাবিক আকৃতির মাথা নিয়ে শিশু জন্মানো ছাড়াও মস্তিষ্কে আরও বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা তৈরি হতে পারে। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের এক পঞ্চমাংশের সন্তানই এ সকল অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মাতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
গত বছর ব্রাজিলে মাইক্রোসেফালি বা অস্বাভাবিক আকৃতির মাথা নিয়ে শত শত শিশুর জন্ম হয়। মশাবাহিত ভাইরাস জিকাকে এ ধরণের শিশু জন্মানোর কারণ বলে সে সময়ই সন্দেহ করা হচ্ছিল। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা গবেষণা শুরু করেন। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জিকা ভাইরাস থেকে যে মাইক্রোসেফালি হতে পারে সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। এর আগে যৌন মিলনের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর কথাও নিশ্চিত করেছিলেন তারা।
এবার ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিকা ভাইরাস নিয়ে তারা আগে যেমনটা ভেবেছিলেন তার চেয়েও এর প্রভাব বেশি ভয়াবহ হতে পারে। জিকার কারণে কেবল মাইক্রোসেফালিই নয়, মস্তিষ্কে আরও বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাদের দাবি, জিকা আক্রান্ত নারীদের এক শতাংশের সন্তান মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নিলেও এ ভাইরাস আক্রান্ত ২০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর সন্তানের মস্তিষ্কে ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

সম্প্রতি সিডিসির প্রধান টম ফ্রাইডেন জানান, জিকা ভাইরাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এবং ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে ব্যাপক আকারে গবেষণা চলছে। তবে এ ধরনের গবেষণা শেষ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এডিস প্রজাতির মশা থেকে জিকা ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকে। জ্বর, জয়েন্ট পেইনসহ ছোটখাটো কিছু শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় এ ভাইরাসের কারণে। আবার তা এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে সেরেও যায়। তবে বিপত্তি তৈরি হয় গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি তথা বিকৃত ও ছোট মাথা নিয়ে জন্ম নিতে পারে শিশু। এসব শিশুর বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি থাকে, শারীরিক বৃদ্ধি কম হয় এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
জিকা ভাইরাস সর্বপ্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় রেসাস ম্যাকাক নামের বানরের দেহে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়াতে মানবদেহে প্রথমবারের মতো ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ব্রাজিলে ব্যাপক আকারে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিলে গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ১১১৩ জন মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ব্রাজিলের পর ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশসহ যুক্তরাষ্ট্রেও শনাক্ত হয়েছে জিকা। তবে সিডিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা জিকা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন তারা জিকাপ্রবণ দেশ ভ্রমণ করে এসেছিলেন। সূত্র: বিবিসি

/এফইউ/