বিদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন এক শ্রমিকউৎপাদন, নির্মাণ, কৃষিখাত ও আসবাব শিল্প খাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। লোকবলের তীব্র সংকটের কথা মাথায় রেখে মন্ত্রিসভা এসব খাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী দাতুক সেরি লিও টিয়ংলাই।
আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের সরকারে মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তবে তার পরদিনই বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিতের ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। ওই সমঝোতা স্মারকে কতো শ্রমিক নেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও মৌখিকভাবে বছরে তিন লাখ করে মোট ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয় বলে সে সময় বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।  শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ওই সমঝোতা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হলো।
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার খবরটি প্রকাশ করেছে। গত মাসে মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদিও শিগগিরই বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। 
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য খুলছে মালয়েশিয়ার দরজা
লিও টিয়ংলাইকে উদ্ধৃত করে স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা এরইমধ্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য কাজ করছে এবং তা শেষ হলে অন্যান্য খাতের ওপর থেকেও ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।  


লিও বলেন, ‘আরও বেশি স্বচ্ছ ও জবাবদিমিূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে আমরা ধীরে ধীরে অন্য খাত থেকেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেব। এসব খাতে শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে নিয়োগকারীরা যদি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি অনিশ্চয়তায় বেঅগেন, তখন তা আমাদের অর্তনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।’

বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা স্মারকে সই করে মালয়েশিয়া
তবে প্রত্যেকটি খাতের সমস্যা ও পরিস্থিতিগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করতে ও ভালোভাবে বুঝতে সরকারের কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি। লিও এর মতে, মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ওপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান মেনুফ্যাকচারার্স এক জরিপে দেখা যায়, ৮৪ শতাংশ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান শ্রমিক সংকটে ভুগছে। জরিপে দেখা যায়, চলতি বছর ১৪৬টি কোম্পানির জন্য ১৩,২৭০ জন নতুন শ্রমিক প্রয়োজন। 

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইএনএফ পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ রাশিয়ার

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে কেবল ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক নেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। এরপর গত বছর বাংলাদেশকে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে কর্মী নেওয়ার আলোচনা শুরু হয়।

এর ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

ওই চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়া তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ বাংলাদেশি কর্মী নেবে বলে অনুষ্ঠানের পর জানানো হয়। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী হামিদি বাংলাদেশসহ সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে জনশক্তি আমদানি স্থগিতের ঘোষণা দেন। তিনি সে সময় বলেছিলেন, “কতো শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন সে বিষয়ে সরকার সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নেওয়া স্থগিত থাকবে।'' সূত্র: দ্য স্টার

/এফইউ/বিএ/