রুয়ান্ডার গণহত্যার ঘটনায় দুই সাবেক মেয়রের আমৃত্যু কারাদণ্ড

টিটো বারাহিরা (বামে) ও অক্টাভিয়েনের স্কেচ১৯৯৪ সালে সংখ্যালঘু টাটসি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে রুয়ান্ডার সাবেক দুই মেয়রকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার ৫৮ বছর বয়সী অক্টাভিয়েন নোগেনজি এবং তার পূর্বসূরী টিটো বারাহিরাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে প্যারিসের আদালতে ঐতিহাসিক এ রায় দেওয়া হয়।
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার শিকার হন ৮ লাখ মানুষ। নিহতদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু টাটসি সম্প্রদায়ের। চরমপন্থী হটুরা এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। ৬ই এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ গণহত্যায় অক্টাভিয়েন এবং টিটো বারাহিরা একইসঙ্গে ‘সুপারভাইজার’ এবং ‘ঘাতক’-এর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে বুধবার (৬ জুলাই) রায় দেয় প্যারিসের আদালত। তবে সাবেক দুই মেয়রের আইনজীবীর দাবি, তার মক্কেলরা অসহায় ছিলেন। বিশৃঙ্খলা ঠেকানোর পরিস্থিতি তাদের ছিল না।

প্রসিকিউটর ফিলিপ কোরোয়ে সাবেক দুই মেয়রকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন আদালতে। তার দাবি, নোগেনজি এ গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আর বারাহিরা চাপাতি চালিয়েছেন।

এদিকে দুই সাজাপ্রাপ্তের আইনজীবী বলছেন, তার মক্কেলরা আদালতে আপিল করতে পারেন।

১৯৯০ সালে রুয়ান্ডায় হুটুরা আগ্রাসনের মাধ্যমে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। টাট্‌সিরা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। ১৯৯৩ সালে বৈদেশিক সহায়তায় হুটু ও টাট্‌সিদের মধ্যে একটি শান্তি ও নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রাথমিকভাবে আরুশা অ্যাকর্ড কার্যকর হয়। প্রথমে মনে হচ্ছিল কূটনৈতিকভাবে বিদ্রোহী ও সরকারের মধ্যে সংঘাতের অবসান হতে চলেছে। কিন্তু সরকারের মধ্যে অভিজাত ব্যক্তিরা বিদ্রোহীদের সাথে চুক্তির বিরুদ্ধে ছিল।

পুনরায় গৃহযুদ্ধের সূচনা এবং টাট্‌সি বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য হুটুদেরকে ফ্রান্স সরকারের সহযোগিতার কারণে গণহত্যা বিকট রূপ ধারণ করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। ফলশ্রুতিতে হুটুরা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

২০১৫ সালে গণহত্যায় ভূমিকার কারণে ৬১ জনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করে জাতিসংঘের অপরাধ আদালত। ২০০৯ সালে রুয়ান্ডার জনতার আদালত গাকাকা অভিযুক্ত দুই সাবেক মেয়রের অনুপস্থিতে তাদের বিরুদ্ধে আজীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করে। ২০১০ সালে ভারত মহাসাগরের ফরাসি এলাকা মায়োত্তে থেকে আটক হন নোগেনজি। পরিচয় গোপন করে সেখানে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। আর বাহারিয়া আটক হন ২০১৩ সালে ফ্রান্সের তৌলুজ শহর থেকে।  সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

/এফইউ/