ইরাকে মার্কিন সিদ্ধান্তই আইএসের উত্থান ঘটিয়েছে: ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, ইরাক যুদ্ধের পর দেশটির সেনাবাহিনী থেকে বাথ পার্টির সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়ার মার্কিন পরিকল্পনাই ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থান ঘটিয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) হাউজ অব কমন্সের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সামনে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে ইরাক যুদ্ধে মার্কিন ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন হ্যামন্ড।

ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, ‘সাদ্দামের পতনের পর ক্ষমতাসীন বাথ পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে তাৎক্ষণিক চাকরি হারান ইরাকি সেনাবাহিনীর প্রায় চার লাখ সদস্য। আর তাদেরই একটি বড় অংশ আইএস গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখে।’

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কারের পর বহু বার্থ পার্টির সমর্থক আইএস-এ যোগ দিয়ে বেশ বড় বড় পদ পেয়েছেন। তারাই মূলত আইএস-এর পেশাদার বাহিনী গঠনে বড় ভূমিকা পালন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধের পর এই পরিকল্পনা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। আমরা যদি ভিন্ন পথ অনুসরণ করতাম তাহলে অবশ্যই আমরা ভিন্ন ফলাফল দেখতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা যেসব সমস্যা দেখছি তার অনেক কিছুই তৈরি হয়েছে ইরাকি সেনাবাহিনী থেকে বাথ পার্টির সমর্থকদেরকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে।’

২০০৩ সালে ইরাক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক পল ব্রেমারের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০০৩ সালে টনি ব্লেয়ার এবং ইরাক ইনকোয়ারি হাতে চিলকটইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের অংশগ্রহণ নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে ওই যুদ্ধকে ‘ভুল’ ও ‘অপরিণামদর্শী’ বলে উল্লেখ করা হয়। ২০০৯ সালে গঠিত চিলকট কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গোয়েন্দাদের ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার যে পরিস্থিতিতে যুদ্ধে যাবার আইনগত ভিত্তি ছিল বলে মনে করেছিল, তা যথাযথ ছিল না। গোয়েন্দা তথ্যে সাদ্দামের জীবাণু অস্ত্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখার প্রমাণ মেলেনি। ‘ইরাকের ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র বিশ্বকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে’ – এমন কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাককে নিরস্ত্র করার জন্য সকল শান্তিপূর্ণ উপায় না শেষ করেই তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার সরকার সামরিক আগ্রাসনের পথ বেছে নেন। কোনও রকম বিচারবিশ্লেষণ ছাড়াই সৈন্য পাঠানো হয় ইরাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদ্দাম হোসেন সন্দেহাতীতভাবে অত্যাচারী একনায়ক হলেও নিরাপত্তা কাউন্সিলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। অনেক শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা নেওয়া হয়নি।
ব্রিটেনে অনেক বিরোধিতা থাকার পরেও তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মিথ্যার জোরে দেশটি ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বলে ব্লেয়ার নিজেই তার বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি ওই যুদ্ধের দায়ভার নিজের কাঁধে নিলেও সাদ্দাম হোসেন পরবর্তী বিশ্বকে তিনি অধিকতর ভালো বলে মনে করেন। টনি ব্লেয়ার ইরাক যুদ্ধের জন্য বিচারের মুখোমুখিও হতে পারেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে ১৭৯ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হন। ব্রিটিশ সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১০ বিলিয়ন পাউন্ড। এই যুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ ইরাকি নিহত হন এবং ১০ লাখের বেশি ইরাকি বাস্তুচ্যুত হন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এসএ/