কুইন নন, কুইন মেকার হয়েই থাকতে চান মমতা

মমতা বন্দোপাধ্যায়পশ্চিমবঙ্গে তিনি তো বহু দিনই ‘দিদি’। কিন্তু ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে কুইন নন, কিং কিংবা কুইন মেকার হয়েই থাকতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহু জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২১ জুলাই, বৃহস্পতিবার তিনি সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন কলকাতার ধর্মতলার বিশাল সমাবেশের সভামঞ্চ থেকে।
এবারের বিধানসভা ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২১১টি আসনে জিতে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ জল্পনা করছিলেন, মহাকরণ ও নবান্ন তো হয়ে গেল, মমতার লক্ষ্য এবার নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক। কিন্তু সেই জল্পনাতেই বরফ-শীতল জল ঢেলে দিয়ে ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে মমতা জানিয়ে দিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিনি হতে চান না, বাংলার কুঁড়েঘরেই তিনি ভালো আছেন!
অথচ এর পাশাপাশি মমতা এটাও জানিয়ে দিতে ভোলেননি, বিজেপির কাছ থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতা কাড়তে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তিনি তার সহযোগী শক্তিগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
এই সহযোগী শক্তি কারা? নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদব, জয়ললিতা, মুলায়ম-অখিলেশ সিংহ যাদব, নবীন পট্টনায়ক এবং অবশ্যই অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, আঞ্চলিক দলগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, সাউথ ব্লকের চেয়ারে নীতিশ কুমারকেই দেখতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, নীতিশ সুশাসক, অসাম্প্রদায়িক, বিতর্কমুক্ত এবং দু‌র্নীতির সঙ্গে আপসহীন।
এবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা তার প্রধান, বলতে গেলে প্রায় একমাত্র প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপিকেই চিহ্নিত করেছেন। বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি কংগ্রেস ও সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে। কারও কারও বিশ্লেষণ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই মমতার এই অবস্থান। তবে এটা কিছুটা ঠিক, পুরোটা ঠিক নয়। কারণ, বিজেপিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঠাউরে আক্রমণটা রাজনীতির দিকে নজর রেখেও। আর এখানেই মমতার দূরদর্শিতা।

বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস এবার জোট করেও মমতাকে হারাতে পারেনি। নিজেদের ভোটব্যাংকও অটুট রাখতে পারেনি তারা। উল্টো বিজেপিকে যারা গুরুত্বই দেননি, তাদের অবাক করে দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর দল যথেষ্ট ভাল ফল করেছে। হয়তো তাড়াতাড়ি বলা হয়ে যাবে, তবু ভবিষ্যতের দেওয়াল লিখনটা আবছা হলেও এখন থেকেই দেখা যাচ্ছে। তা হলো, রাজ্যে লড়াই হবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটরক্ষা তো দূরের কথা, নিজের নিজের দলের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়েই নাস্তানাবুদ।

এই অবস্থায় তৃণমূলবিরোধী সাধারণ ভোটাররা; যারা অত কমিউনিস্ট আদর্শ কিংবা সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক এসবের ধার ধারেন না, তাদের একটা বড় অংশ বেছে নিতে পারেন বিজেপিকেই। এটা মাথায় রেখেই মমতা বলেছেন, কে কী খাবেন, গরুর মাংস খাবেন না ছাগলের মাংস খাবেন, লুঙ্গি পরবেন না ধুতি পরবেন, সেটা কেউ ঠিক করে দিতে পারেন না। এতে মুসলমান ভোটব্যাংকে মমতার পুঁজি তো আরও বাড়বে, সেই সঙ্গে তিনি টেনে নিতে পারেন উদারমনা হিন্দুদেরও। যারা খাদ্যাখাদ্য বিচার করেন না, পোশাক নিয়ে ছুঁতমার্গ রাখেন না। এখানেই বাজিমাত করে দিয়েছেন মমতা। বিরোধী কেন, তৃণমূলের বহু তাবড় নেতাও এতটা ভাবতে পারেননি।

আরও পড়তে পারেন: ৫১ নেতাকর্মীর পরিবারে ভাগ করে দেয় হুজি নেতা নাজিমউদ্দিন



 

আরও পড়তে পারেন: প্লাস্টিক ব্যবসায়ী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিল ‘জঙ্গি’ শফিউল (ভিডিও)


/বিএ/ এপিএইচ/আপ-এমএসএম/