নতুন বোকো হারাম নেতার নাম ঘোষণা আইএসের

পশ্চিম আফ্রিকায় নিজেদের শাখা সংগঠন বোকো হারামের নতুন নেতার নাম ঘোষণা করেছে সুন্নিপন্থী সশস্ত্র সংগঠন আইএস। নতুন নেতার নাম আবু মুসাব আল বারনাওয়ি। এর আগে তিনি নাইজেরিয়ায় সংগঠনটির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আইএস-এর নিজস্ব একটি ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সংখ্যায় তার নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এতে ২০০৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালনকারী বোকো হারাম নেতা আবুবকর শেকাউ-এর সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত ‘বোকো হারাম’ বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম। নাইজেরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার দখল রয়েছে তাদের হাতে। তাদের জঙ্গি কর্মকাণ্ড নাইজেরিয়া ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ক্যামেরুন পর্যন্ত পৌঁছেছে। নাইজেরিয়ার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বোকো হারামের নিষ্ঠুরতার শিকার।

উত্তর এবং কেন্দ্রীয় নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম চালায়। গবেষণা সংস্থা 'দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ' (আইসিজি) জানায়, এই ছোট দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সংগঠিত ও নিষ্ঠুর অংশের অবস্থান বর্নো রাজ্যে। এই রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার দখল তাদের হাতে। শহর বা গ্রামে আকস্মিকভাবেই হামলা চালায় তারা। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত শক্তি না থাকায় নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী তখন পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এই সুযোগে তারা ওই এলাকায় শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে।

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করেছিল। সেই অভিযানে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাসহ অসংখ্য সদস্যকে হত্যা করা হয়। জীবিতরা এরপর সুদান, আলজেরিয়া, এমনকি আফগানিস্তানেও আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই ওই অঞ্চলের জঙ্গিগোষ্ঠীদের কাছে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে নাইজেরিয়ায় ফিরে আসে। প্রথমে বোকো হারাম স্থানীয় মুসলিমদের কাছে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বিকল্প ব্যবস্থা প্রণয়ন করার স্বপ্ন দেখালেও এখন কাজ শুধু দখলদারিত্ব বৃদ্ধি।

কোনো অঞ্চল দখলের পর স্থানীয়দের অনেকটা জোর করেই বাহিনীতে নিয়োগ দেয় বোকো হারাম। রাজি না হলে হত্যা পর্যন্ত করা হয়। এছাড়া স্থানীয় অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আইসিজি জানায়, 'অনেক সময় জঙ্গি হামলার জন্য অর্থের বিনিময়ে এসব সন্ত্রাসীও সংগ্রহ করে।'

চলতি বছরের মে মাসে আইএসের সঙ্গে বোকো হারামের সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যায়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বোকো হারামের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা তখন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র কাছে দাবি করেন, বোকো হারামের যোদ্ধাদের লিবিয়ায় আইএসে যোগ দেওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। জাতিসংঘের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, এ নিয়ে তারা খুবই উদ্বেগের মধ্যে পড়েছেন এবং সঙ্কট মোকাবেলার পথ খুঁজছেন।

বোকো হারাম ও আইএসের যোগসাজসের বিষয়ে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেন, ‘আমাদের হাতে থাকা সমস্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে এইটুকু বুঝতে পারা যায় যে এই দুই সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে।’ সূত্র :  বিবিসি।

/এমপি/