আদালতের রুলে করবিনের নেতৃত্ব পোক্ত হওয়ার আভাস

জেরেমি করবিনব্রিটেনের আদালতে লেবার পার্টির নেতা নির্বাচনে ১,৩০,০০০ সদস্যের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমান দলীয় প্রধান জেরেমি করবিন লাভবান হতে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই রুলের কারণে দলীয় প্রধানের পদ ধরে রাখতে সক্ষম হবেন করবিন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই আভাস দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, দলের তৃণমূল কর্মীদের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে লেবারদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন করবিন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা না হওয়ার পক্ষে অর্থাৎ ‘রিমেইন’ শিবিরের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্রিটিশ জনগণের রায় এর বিপক্ষে যাওয়ার পর দলীয় নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন এ লেবার নেতা। গত মাসে লেবার পার্টির অন্যতম প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি (এনইসি) এর পক্ষ থেকে ভোটারদের ব্যাপারে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, ১২ জুলাই পর্যন্ত লেবার পার্টির যেসব সদস্যের সদস্য পদের মেয়াদ অন্তত ছয় মাস হয়ে কেবল তারাই ভোট দিতে পারবেন। পরে লেবার পার্টির পাঁচ সদস্য ১ লাখ ৩০ হাজার নতুন লেবার সদস্যদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নামেন। অবশেষ আদালত তাদের পক্ষেই রায় দিলো। বাদী পক্ষের আইনজীবী কেট হ্যারিসনের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘লেবার পার্টির সংবিধান মোতাবেক ভোটাধিকার প্রশ্নেই এ মামলাটি করা হয়েছিল। লেবার পার্টির সংবিধান অনুযায়ী, সব সদস্য সমান ও মূল্যবান।’
আদালতের এ রুলের কারণে লেবার পার্টির নতুন সদস্যদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

আদালতের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন ক্রিস্টিন ইভানগেলু নামের এমনই এক নতুন সদস্য। তিনি জানান, করবিন ও লেবার মূল্যবোধকে সমর্থন দিতে সম্প্রতি তিনি লেবার পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। ক্রিস্টিন বলেন, ‘ওরা আমার ভোট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল তাই আমি বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম।’

ক্রিস্টিনের মতো করেই সম্প্রতি লেবার পার্টিতে যোগ দিয়েছেন বহু তরুণ সদস্য। করবিনের নেতৃত্ব প্রশ্নে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে জুলাইয়ের শুরুতে এক সপ্তাহেই ষাট হাজার লেবার সদস্যের যোগ দেওয়ার কথা জানায় সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট। সবমিলে রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার নতুন সদস্য। এদের বেশিরভাগই করবিনপন্থী। আদালতের রুল অনুযায়ী নতুন এই সদস্যরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন, যা করবিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

জেরেমি করবিন ও ওয়েন স্মিথ
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ, ইন্ডিপেনডেন্ট ও গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে তাই বলা হয়েছে, আদালতের রুল নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় করবিনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অন্যদিকে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, নতুন সদস্যদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আরেকবার দলীয় প্রধান হতে যাচ্ছেন করবিন। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস বলছে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউগভের এক জরিপ অনুযায়ী ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে লেবার পার্টিতে যোগ দেওয়া সদস্যদের কাছে করবিনের চেয়ে স্মিথ জনপ্রিয় নেতা। তারপরও ৬০ শতাংশ লেবার সদস্যের রায় নিয়ে দলীয় প্রধান হয়েছিলেন করবিন। এখন বিপুল সংখ্যক নতুন সদস্য যোগ দিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত র‍্যাডিকাল ধারার এই সদস্যরা ব্যয় সঙ্কোচন-ইরাক যুদ্ধ আর পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে করবিনকে লড়াইয়ের সঙ্গী করেছেন। সে কারণে করবিনই আবারও লেবার পার্টির নেতা হতে যাচ্ছেন বলে আভাস দিয়েছে তারা।

তাছাড়া নেতৃত্ব নিয়ে অনাস্থার প্রশ্নে এ বছর জুনে করবিন নিজেও তৃণমূলে তার নিরঙ্কুশ সমর্থনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি লেবার পার্টির সদস্যদের দ্বারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দলীয় নেতা, ৬০ শতাংশ লেবার সদস্য এবং সমর্থক আমাকে এক নতুন ধারার রাজনীতির জন্য নির্বাচিত করেছেন, আর পদত্যাগ করে আমি তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। এমপিদের আজকের এই ভোটের কোনও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই।’

আদালতের রুলের ব্যাপারে লেবার পার্টির এক মুখপাত্র বলেন, ‘এটা ঠিক যে ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির সিদ্ধান্তকে লেবার পার্টি প্রতিহত করতে চায়। আমরা এখন এ রায়কে সতর্কভাবে পড়ে দেখব।’ এদিকে করবিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়েন স্মিথের ক্যাম্পেইনের এক মুখপাত্র জানান, আদালতের আদেশ পর্যালোচনা করার পর তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

এর আগে হাফিংটন পোস্টের ব্রিটিশ সংস্করণকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি হেরে গেলে দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ‘অপরিহার্য’ সম্ভাবনা নাকচ করে দেন জেরেমি করবিন। নির্বাচনে লেবার পার্টি হেরে গেলেও দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। সম্প্রতি লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভার চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেল বলেছিলেন, নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি এবং তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জেরেমি করবিন তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করবেন। অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ‘এমনটা অপরিহার্য’। ম্যাকডোনেল বলেছিলেন, ‘সাধারণত যেসকল লেবার নেতারা নির্বাচনে হেরে যান তারা পদত্যাগ করে থাকেন’।

তবে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে করবিন বলেন, ‘দেখুন, কোনও কিছুই অপরিহার্য নয়। চার বছর পর যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার ফলাফলের আভাস এখনই দেওয়া ঠিক নয়।’

/এফইউ/বিএ/